Tuesday, November 3, 2015

সিলেটের বিছনাকান্দি যেন সম্মোহনী সৌন্দর্য্য



পাহাড়ের বুকে গাঢ় সবুজের আস্তরণ। পাহাড়ের বুক চিড়ে চলেছে শীতল স্বচ্ছ জলরাশি। পাথর ছড়ানো সর্বত্র। আকাশে নীলের ছায়া। এই বিবরণ তো মিলে যাচ্ছে সিলেটের অন্যতম আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র বিছনাকান্দির সঙ্গে!

কিন্তু না, বিছনাকান্দির বর্ণনা নয় এটা! এ হচ্ছে উতমাছড়ার বর্ণনা। যে স্থানকে সিলেটের নতুন 'বিছনাকান্দি' বলে অভিহিত করা হচ্ছে।

প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য্যের লীলাভূমি হচ্ছে উতমাছড়া। সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার উত্তর রণিখাই ইউনিয়নে যার অবস্থান।

রূপ-লাবণ্যে যৌবনা উতমাছড়া পরতে পরতে সাজিয়ে রেখেছে সম্মোহনী সৌন্দর্য্য। যান্ত্রিক কোলাহল থেকে মুক্ত নির্জন অরণ্যের সাহচার্য পেতে উতমাছড়ার বিকল্প নেই। আছে সবুজের সমারোহ, দিগন্ত বিস্তৃত সাদা মেঘের খেলা, পাথর ছড়ানো চারপাশ, দুধসাদা জলরাশি, পাখিদের কলতান। মুগ্ধ না হয়ে উপায় নেই!
ঘুরে অাসুন 'বিছনাকান্দি' থেকে
উতমাছড়ার সৌন্দর্য্য সবচেয়ে বেশি ধরা দেয় বর্ষাকালে। অন্যান্য মৌসুমে উতমাছড়াকে মরুভূমির বুকে গজিয়ে ওঠা উদ্যানের মতো মনে হয়।

যাওয়ার পথ: সিলেট মহানগরীর আম্বরখানা পয়েন্ট থেকে সরাসরি সিএনজি অটোরিকশাযোগে যেতে হবে ৩৫ কিলোমিটার দূরবর্তী দয়ারবাজারে। সড়কের অবস্থা তেমন ভালো না হওয়ায় এ পরিমাণ সড়ক পাড়ি দিতে গুণতে হবে জনপ্রতি ১৫০-১৮০ টাকা করে।

দয়ারবাজার থেকে আবার সিএনজি অটোরিকশাযোগে আট কিলোমিটার দূরবর্তী চড়ারবাজারে যেতে হয়। এজন্য জনপ্রতি ভাড়া ২৫-৩০ টাকা পড়বে। চড়ারবাজার থেকে ১৫ মিনিটের মতো হাঁটলেই পেয়ে যাবেন উতমাছড়ার দেখা।

হরিণবাড়িয়া 'ইকো ট্যুরিজম পার্ক



 প্রকৃতির সৌন্দর্য পিপাসু পর্যটকরা নিজের শরীরে একটু প্রশান্তি অানতে ঘুরে বেড়ান এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। সেই মানুষদের জন্যই অপেক্ষা করে অাছে বরগুনার হরিণবাড়িয়া ইকো ট্যুরিজম পার্ক।

ম্যানগ্রোভ বন, পাখির কলরব, ঝাউবন আর সমুদ্রের গর্জন সবমিলে প্রকৃতির এক অপরূপ সৃষ্টি এই পার্ক। পর্যটকরা এখানে এলে পাবেন সুন্দরবন দেখার আনন্দও।

বরগুনা জেলা সদর থেকে নৌ অথবা সড়ক পথে এক ঘণ্টার পথ দেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র হরিণবাড়িয়া ইকো ট্যুরিজম পার্ক। দূরে বঙ্গোপসাগর, সঙ্গে সংরক্ষিত ম্যানগ্রোভ অঞ্চল যেন হাতছানি দিয়ে কাছে ডাকে প্রতিনিয়ত।

কাঠের তৈরি সাড়ে তিন কিলোমিটার সেতু আর খালের ওপর বেইলি ব্রীজ পার্কের সৌন্দর্যকে বাড়িয়েছে আরো বহুগুণ। ইচ্ছে হলে সুউচ্চ ওয়াচ টাওয়ারে বসেও উপভোগ করা যাবে প্রকৃতির অপূর্ব মেলবন্ধন।

পার্কটিকে ঘিরে নতুন আশার সঞ্চার হয়েছে পাথরঘাটা উপজেলার হরিণঘাটা এলাকার মানুষের মনে। পর্যটকদের আনাগোনায় বেড়েছে তাদের উপার্জন।ঘুরে অাসুন হরিণবাড়িয়া 'ইকো ট্যুরিজম পার্ক' থেকে

স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, আগে কর্মসংস্থানের জন্য এলাকার বাইরে যাওয়ার দরকার হলেও এখন পর্যটক আসাতে এলাকায় থেকেই আয়-উপার্জন করছেন তারা। হরিণবাড়িয়া ইকো ট্যুরিজম পার্ক থেকে প্রচুর রাজস্ব আসতে পারে বলে মনে করছে বনবিভাগও।

পটুয়াখালি বন বিভাগের রেঞ্জ অফিসার সোলায়মান হাওলাদার জানান, এখানে আসলে ভ্রমণ পিয়াসীরা বন এবং সাগরের সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হবেন। বইয়ে পড়া বর্ণনার বাস্তব উদাহরণও পাবেন। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় ইকো পার্কটিকে দেশে বিদেশে আরো জনপ্রিয় করে তোলার দাবি রয়েছে স্থানীয়দের।

Monday, October 26, 2015

সুন্দরবন ভ্রমণ

সুন্দরবনে বেড়াতে যাওয়ার মৌওসুম শুরু হয়েছে, চলবে যা এপ্রিল পর্যন্ত জমজমাট আমেজে, যদিও সারাবছরই সেখানে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। সুন্দরবনে ভ্রমণ অন্যকোনো পর্যটনের চেয়ে ভিন্ন ও  অনন্য। বনবিভাগের অনুমতিসাপেক্ষে এখানে ভ্রমণে যেতে হয় তাদের আদেশ-নিষেধ মেনে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি সুন্দরবন একটি সংরক্ষিত বনাঞ্চল।

সুন্দরবনের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ এলাকা বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য। অভয়ারণ্যের বাইরেও বন্যপ্রাণীদের অবাধ বিচরণ রয়েছে। পর্যটকদের নিরাপত্তা বিধান এবং বিকাশমান পর্যটন শিল্পের অতিরিক্ত চাপে সুন্দরবনের প্রাকৃতিক পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের যাতে ক্ষতি না হয় তা নিশ্চিত করতে সুন্দরবন ভ্রমণ নীতিমালা প্রণয়ন করেছে বনবিভাগ। গত বছর ডিসেম্বর মাসে প্রণীত এ ভ্রমণ নীতিমালার উদ্দেশ্য, মূখ্য বিষয় এবং পর্যটক, ট্যুর অপারেটর ও বনবিভাগের দায়িত্ব এখানে সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে।

নীতিমালায় সুন্দরবন ভ্রমণের নির্ধারিত ও আটটি রুট হচ্ছেঃ খুলনা ও বাগেরহাট জেলার মংলা-করমজল-হারবাড়ীয়া-মংলা- (১ দিনের জন্য), মংলা-হারবাড়ীয়া-হিরণপয়েন্ট-দুবলা-মংলা (১-২ দিনের জন্য), মংলা-ঢাংমারী-সুপতি-কচিখালী-কটকা-মংলা (২-৩ দিনের জন্য) ও মংলা-ঢাংমারী-সুপতি-কচিখালী-কটকা-দুবলা-হিরণ পয়েন্ট (নীলকমল)-হারবাড়ীয়া-মংলা (৩-৪ দিনের জন্য), পিরোজপুর জেলার সুপতি-কচিখালী-কটকা-সুপতি (২-৩ দিন) ও সুপতি-কচিখালী-কটকা-দুবলা-হিরণপয়েন্ট (নীলকমল)-সুপতি এবং সাতক্ষীরা জেলার মুন্সীগঞ্জ-দোবেকী-কলাগাছিয়া- বুড়িগোয়ালিনী/মুন্সীগঞ্জ (১ দিন) ও বুড়িগোয়ালিনী-দোবেকী-কাগাদোবেকী-হিরণপয়েন্ট-বুড়িগোয়ালিনী/মুন্সীগঞ্জ (১-২ দিন)।

অভয়ারণ্য ব্যতীত সুন্দরবনে পর্যটকদের ভ্রমণ ফি ও অন্যান্য ফি হচ্ছেঃ প্রতিজন প্রতিদিন দেশি-৭০/-, বিদেশি-১০০০/- ১২ বছরের নিচে শিশু-১৫/-, করমজল/ সমমান (কলাগাছিয়া)– দেশি-২০/-, বিদেশি-৩০০/-  ১২ বছরের নিচের শিশু (দেশি) - ১০/-, ছাত্র/ছাত্রী-দেশি-২০/-, গবেষক-দেশি-২০/-বিদেশি-৫০০/-, লঞ্চ ক্রু-৭০/-,গাইড-৫০০/-, নিরাপত্তা গার্ড-৩০০/- ভিডিও ক্যামেরা দেশি পর্যটক-২০০/-, বিদেশি-৩০০/-ও তথ্য কেন্দ্রে প্রবেশ ফি-১০/-। অভয়ারণ্য এলাকা-প্রতিজন-প্রতিদিন দেশি-১৫০/-, দেশি ছাত্র/ছাত্রী-৩০/- বিদেশি -১৫০০/- ও  ১২ বছরের নিচের শিশু ১০/-। সুন্দরবন ভ্রমণে খুলনা ও বাগেরহাটে সুন্দরবন পূর্ব ও পশ্চিম দুটি  বিভগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তাদের কাছ থেকে কমপক্ষে তিনদিন আগে অনুমতি নিতে হয়। যাদের  টেলিফোন নং খুলনা-০৪১-৭২০৬৬৫ ও মোবাইল-০১৭১১৫৮১৪২৯ এবং বাগেরহাট-০৪৬৮-৬৩১৯৭ ও মোবাইল -০১৭১০৯৩৪৩৬৩।  ভ্রমণ কর দিয়ে যে সব স্টেশন পশ্চিম বিভাগের খুলনা রেঞ্জের তালিমপুর, কাশিয়াবাদ, বানিয়াখালী, নলিয়ান, কালাবগী ও সুতারখালী এবং সাতক্ষীরা রেঞ্জের কৈখালী, কদমতলা বুড়িগোয়ালিনী ও কোবাদক। পূর্ব বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের ঢাংমারী, চাঁদপাই, জিউধরা ও ধানসাগর এবং শরণখোলা রেঞ্জের শরণখোলা, বগী ও সুপতি। সুন্দরবনের ভেতরে অবস্থিত বিশ্রামাগারের প্রতিদিনের ভাড়া কটকা-প্রতি কক্ষ- পর্যটক দেশি ২০০০/- ও বিদেশি-৫০০০/-, সম্পূণর্ন-দেশি-৪০০০/- বিদেশি-১০,০০০/-, কচিখালী প্রতিকক্ষ-দেশি-৩০০০/- ও বিদেশি-৫০০০/-, সম্পূর্ণ-দেশি-১০,০০০/- ও বিদেশি-১৫০০০/- এবং নীলকমল (হিরণ পয়েন্ট)- প্রতিকক্ষ-দেশি-৩০০০/- ও বিদেশি-৫০০০/-, সম্পূর্ণ-দেশি-১২০০০/- ও বিদেশি-২০,০০০/। যানবাহন ফি যেমন হেলিকপ্টার, সিপ্লেন, লঞ্চ, ট্রলার, স্পিডবোট, জলী বোট (ট্যুরিস্টবোট) ইত্যাদি আকারভেদে বিভিন্ন হারের।

Sunday, April 12, 2015

হযরত শাহজালাল (রঃ) মাজার


হযরত শাহজালাল(র:) ছিলেন উপমহাদেশের একজন বিখ্যাত দরবেশ ও পীর। তিনি ছিলেন ওলিকুল শিরোমণি। সিলেট অঞ্চলে তার মাধ্যমেই ইসলামের প্রসার ঘটে। সিলেটের প্রথম মুসলমান শেখ বুরহান উদ্দিনের ওপর রাজা গৌর গোবিন্দের অত্যাচার এবং এর প্রেক্ষিতে হযরত শাহজালাল(র:) ও তাঁর সফরসঙ্গী ৩৬০ আউলিয়ার সিলেট আগমন ইতিহাসের একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। এ কারণে সিলেটকে  ৩৬০ আউলিয়ার দেশ বলা হয়। কেউ কেউ সিলেটকে পূণ্যভূমি অভিধায়ও অভিহিত করেন।
আরবের মাটি ও সিলেটের মাটির মিল

কথিত আছে, প্রাচ্য দেশে আসার পূর্বে শাহজালাল(র:) এর মামা মুর্শিদ সৈয়দ আহমদ কবীর (রঃ) তাকে এক মুঠো মাটি দিয়ে বলেন, ‘স্বাদে বর্ণে গন্ধে এই মাটির মতো মাটি যেখানে পাবে সেখানে বসতি স্থাপন করে ইসলাম প্রচার করবে।’ 

হযরত শাহজালাল(র:) বিশিষ্ট শিষ্য শেখ আলীকে এই মাটির দায়িত্বে নিয়োগ করেন এবং নির্দেশ দেন যে, যাত্রা পথে বিভিন্ন জনপদের মাটির সাথে যেন এই জনপদের মাটির তুলনা করে তিনি দেখেন। পরে এই শিষ্যের উপাধি হয় চাষণী পীর। সিলেট শহরের গোয়াইপাড়ায় তার মাজার বিদ্যমান।

সিলেটের মাটির সাথে আরবের মাটির মিল পাওয়ায় হযরত শাহজালাল(র:) সিলেটে বসতি স্থাপন করে ইসলাম প্রচারে মনোনিবেশ করেন। সিলেটে তেল ও গ্যাস পাওয়ায় আরবের মাটি ও সিলেটের  মাটির মিল প্রমাণিত হয়েছে।

কিভাবে যাওয়া যায়: 

সিলেট রেল স্টেশন অথবা কদমতলী বাস স্ট্যান্ড এ নেমে রিকশা বা সিএনজি অটোরিকশাযোগে মাজারে যাওয়া যায়। রিকশা ভাড়া ২০-২৫ টাকা, সিএনজি ভাড়া ৮০-১০০ টাকা।সুরমা নদী পার হয়ে মূল শহরে এসে মাজার এ পৌছাতে হয়। মাজার গেট রোড এ অনেকগুলো আবাসিক হোটেল রয়েছে। 
তথ্যসূত্র : জেলা তথ্যবাতায়ন

মালনীছড়া চা বাগান


চা একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় পানীয়। সকালে এক কাপ গরম চা না পেলে বাঙালী সমাজের যেন একদম চলে না। বাংলাদেশের যে কয়টি অঞ্চলে চা বাগান পরিলক্ষিত হয় তার মধ্যে সিলেট অন্যতম। সিলেটের চায়ের রঙ, স্বাদ এবং সুবাস অতুলনীয়। উপমহাদেশের প্রথম চা বাগান সিলেট শহরে অবস্থিত। নাম মালনীছড়া। ১৮৪৯ সালে এই চা বাগান প্রতিষ্ঠিত। বর্তমানে বেসরকারী তত্ত্ত্বাবধানে চা বাগান পরিচালিত হয়ে আসছে। ১৫০০ একর জায়গার উপর এই চা বাগান অবস্থিত।চা বাগানের পাশাপাশি বর্তমানে এখানে কমলা ও রাবারের চাষ করা হয়।

মালনীছড়া চা বাগান ছাড়াও সিলেটে  লাক্ষাতুড়া চা বাগান, আলী বাহার চা বাগান, খাদিম, আহমদ টি স্টেট, লালাখাল টি স্টেট উল্লেখযোগ্য।

অবস্থান: মালনীছড়া এবং লাক্ষাতুড়া চা বাগান দুইটিই সিলেট শহরের উপকন্ঠে অবস্থিত। শহরের কেন্দ্রস্থল জিন্দাবাজার পয়েন্ট হতে গাড়ীতে মাত্র ১৫ মিনিটের পথ।

কি কি দেখবেন: পাহাড়ের গায়ে চা বাগানের দৃশ্য, ছায়া বৃক্ষ, চা শ্রমিকদের আবাসস্থল, কমলার বাগান, রাবার বাগান, চা তৈরীর প্রক্রিয়া।

কোথায় অবস্থান করবেন: সাধারনত চা বাগানে থাকার তেমন কোন সুব্যবস্থা নাই। আপনাকে সিলেট শহরেই থাকতে হবে।

কিভাবে যাওয়া যায়: 

সিলেট শহর থেকে রিকশাযোগে অথবা অটোরিকশা বা গাড়িতে বিমানবন্দর রোডে চাবাগানটি পাওয়া যাবে। গাড়িতে যেতে আম্বরখানা পয়েন্ট থেকে ১০ মিনিট এর পথ।রিকশাযোগে যেতে আধঘন্টা লাগবে।তথ্যসূত্র : জেলা তথ্যবাতায়ন 
   

রাজশাহীর পুঠিয়া রাজবাড়ী



রাজশাহী ও ঢাকা মহাসড়কের দক্ষিণ পার্শ্বে রাজশাহী শহর থেকে প্রায় ৩২ কিলোমিটার পূর্ব দিকে সুপারী আর নারিকেল গাছে ঘেরা সুবিশাল এলাকায় মাথা উচু করে দাড়িয়ে আছে মন্দিরের এক শহর যার নাম পুঠিয়া। পুঠিয়া রাজবাড়ীর বিশাল চত্বরকে ঘিরে রয়েছে বেশ কয়েকটি প্রাচীন স্থাপনা যা সহজেই আপনার নজর কাড়তে সক্ষম হবে। প্রাচীন এই স্থাপনা গুলির মধ্যে রয়েছে মন্দির. রাজবাড়ী, রাজবাড়ীকে চার দিক থেকে ঘিরে রাখা পুকুর-দিঘি সহ নানান স্থাপনা।

ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক থেকে রিক্সা অথবা ভ্যান ধরে কিছুটা পথ সামনে গেলেই বিশাল একটা চুঁড়া জানান দিবে মন্দিরের অবস্থান। রাজবাড়ীর প্রবেশ পথে পুকুরের পাড়ে নিশ্চুপ দাড়িয়ে থাকা এ মন্দিরটির নাম শিব মন্দির। মহারাণী ভুবন মোহনী দেবী ১৮২৩ সালে এই মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেন। পরিসংখ্যান মতে এটিই এশিয়ার সবচেয়ে বড় শিব মন্দির। সিঁড়ি বেয়ে মন্দিরের দোতলায় উঠলেই দেখা যাবে এর চার পাশের বারান্দা এবং একটি মাত্র কক্ষ যা দুই স্তর বিশিষ্ঠ বারান্দাকে ঘিরে রেখেছে। মন্দিরের মূল কক্ষের অভ্যন্তরে রয়েছে কষ্ঠি পাথরের বিশাল এক শিব লিঙ্গ। সমগ্র মন্দিরের দেয়ালে পৌরাণিক কাহিনী চিত্র খচিত আছে। শিব মন্দিরের কোল ঘেঁষে লাগানো পূর্ব পাশে গোল গুম্বুজ আকৃতির আরেকটি ছোট মন্দির আছে। শিব মন্দির পেরিয়ে দক্ষিণ দিকে গেলেই চোখে পড়বে চার তলা বিশিষ্ঠ আরেকট্ িমন্দির যার নাম দোল মন্দির। চার পাশে প্রায় ১০০০ টি দরজা সম্বলিত এই মন্দিরটি স্থানীয় লোকজনের কাছে হাজার দুয়ারী ঘর নামে পরিচিত। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে রাণী হেমন্ত কুমারী দেবী এ মন্দিরটি নির্মাণ করেন। দোল মন্দিরের সামনে ঘাসে ঢাকা বিশাল মাঠের দক্ষিণ প্রান্তে দাড়িয়ে আছে পুঠিয়ার ঐতিহাসিক রাজবাড়ী।

রাণী হেমন্ত কুমারী দেবী তাঁর শাশুড়ি মহারাণী শরৎসুন্দরী দেবীর সম্মানার্থে ১৮৯৫ সালে নির্মাণ করেন বিশাল আকৃতির বিখ্যাত এই রাজবাড়ী। পুঠিয়ার এই রাজবাড়ীটি বর্তমানে লস্করপুর মহাবিদ্যা নিকেতনের একাডেমিক ভবন হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। রাজবাড়ীর পূর্ব পাশে রাজরাণীর গোসল করার জন্য পুকুরের কোল ঘেঁসে তৈরী করা হয়েছিল সান বাঁধানো রাণী ঘাট যার অস্তিত্ব এখনো বিদ্যমান। পুঠিয়া রাজবাড়ীর ভেতরে পোড়ামাটির অলঙ্করণে সমৃদ্ধ একটি মন্দির আছে যার নাম গোবিন্দ মন্দির। বর্গাকারে নির্মিত এই মন্দিরটির চার পাশে চারটি বর্গাকার কক্ষ আছে। মন্দিরটি আড়াইশ বছরের পুরোনো বলে প্রচলিত থাকলেও এর চাকচিক্য দেখে ধারণা করা হয় এটি উনবিংশ শতাব্দীতেই তৈরী করা হয়েছিল। গোবিন্দ মন্দিরের দক্ষিণ পাশে ছোট আরো একটি মন্দির রয়েছে। রাজবাড়ীর পশ্চিম পাশে দিঘি এবং তার পশ্চিম তীরেই রয়েছে কারুকার্য খঁচিত আকর্ষণীয় বড় আহ্নিক মন্দির। আহ্নিক মন্দিরের পাশে দক্ষিণমুখী অবস্থায় আরো একটি মন্দির দাঁড়িয়ে আছে যার নাম গোপাল মন্দির। সুপারী ও নারকেল গাছঘেরা ঐতিহাসিক স্থাপত্য শৈলীর প্রাচীন এই নিদর্শন গুলো দেখার জন্য প্রতিদিন দেশ বিদেশের শত শত পর্যটক ভিড় জমান রাজশাহীর পুঠিয়ায়।

সানবান্ধ্যা-বালিরটেক


কোন রিসোর্ট নয়, পুরো একটা দিন যদি ঢাকার কাছাকাছি বাংলার সুন্দর কোন নিভৃত গ্রামে কাটিয়ে দিতে চান, তবে চলে যান যান মানিকগঞ্জ এর সানবান্ধ্যা বালিরটেক এলাকায়। ছোটবেলায় বইয়ের পাতায় যে গ্রামের ছবি দেখেছেন, মিল খুজে পাবেন এ এলাকায় গেলে। এখানকার প্রকৃতি সতেজ, মানুষগুলো খাটি এবং জিনিষপত্র ভেজালমুক্ত। তাই যে কোন একটা ছুটির দিন চলে যান সানবান্ধ্যা-বালিরটেক।

কি করে যাবেন : গাবতলি থেকে প্রতি আধঘন্টা পরপর হরিরামপুরের 'শুকতারা' বাস ছাড়ে। এতে উঠে সানবান্ধ্যা ফেরিঘাট নেমে যাবেন। সময় লাগবে দেড় ঘন্টার মতো আর ভাড়া নেবে ৬০ টাকা।

যারা প্রাইভেট কার নিয়ে যাবেন তারা হেমায়েতুপুর থেকে হাতের বা দিকের রাস্তা ধরে যেতে থাকবেন সিংগাইর এর পর হাতে বা দিকে কিছুটা গেলেই সানবান্ধ্যা ফেরিঘাট।

কি করে ঘুরবেন : ফেরিঘাটে নেমেই চলে যাবেন কাছের কুমারবাড়িতে। দেখবেন কি অসাধারন দক্ষতায় একেকজন শিল্পী তৈরী করেন একেকটি মাটির পাত্র। এরপর ফেরী পার হয়ে বালির টেক চলে যান।

বালিরটেক নেমেই ফেরিঘাটের পাশে নিরিবিলি রেষ্টুরেন্ট এ খাবারের অর্ডার করে দিন। এদের দেশী মুরগির রান্নাটা অসাধারন। এরপর পাকা রাস্তা ধরে সুলতানপুরের দিকে যাত্রা করবেন। একটু পরেই কাচা রাস্তায় চলে আসবেন। এবার সুলতানপুর গ্রামটা ভালো করে দেখবেন। সুলতানপুর পার হয়ে যাবেন করিমকান্দি। এরপর বলাতলী হয়ে আবার ফিরে আসতে পারেন বালিরটেক ফেরিঘাটে। দুপুরের খাবার খেয়ে পাশে কালী গঙ্গা নদীতে গোছলটা সেরে নিতে পারেন। এরপর শেষ বিকেলে বাসে করে ঢাকার পথে যাত্র।

চিলাই নদী, বেলাই বিল গাজীপুর


ঢাকার খুব কাছে বেলাই নামে স্বচ্ছ জলের একটা বিল আছে কজনই বা জানেন সেটা? আর সাথে আছে চিলাই নামের সুন্দর একটা নদী। গাজিপুর সদরের পর ভাওয়াল রাজবাড়ির পার হয়ে ডানে টার্ন নিয়ে বেশ কিছুটা পথ গেলেই দেখা মিলবে এ বিল আর নদীর। কানাইয়া বাজারে নাস্তা করে একটা নৌকা ভাড়া করে সারাদিন আর চাইলে রাতেও জলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন।

যেভাবে যাবেন : গাজিপুর সদর পর্যন্ত যে কোন বাসে। সেখান নেমে টেম্পুতে কানাইয়া বাজার। ভাড়া নেবে ১০ টাকা করে। কানাইয়া বাজারে নেমে ব্রিজ পার হয়ে চেলাই নদীতে বাধা নৌকা ঠিক করে উঠে পরুন।

আর যারা ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে যাবেন তারা এভাবে যান, যাত্রা অনেক আরাম দায়ক হবে : টঙ্গী ফ্লাইওভার পার হয়ে সামনের দিকে যেতে থাকুন। পুবাইল কলেজ গেট থেকে বায়ের ছায়াঘেরা রাস্তায় ঢুকে যান। এখান থেকে মাইল চারেক দুরে (জল জঙ্গলের কাব্য পার হয়ে) গিয়ে ডানে টার্ন নিয়ে মিনিট দশেক গেলেই কানাইয়া বাজার। আর এ বাজারের ঠিক পাশেই চিলাই নদী আর বেলাই বিল। (সংগ্রহীত)

বরিশাল ব্যকওয়াটার এবং ফ্লোটিং মার্কেট ট্যুর


যারা কেরালার ব্যকওয়াটার দেখে আফসোস করেন বা থাইল্যান্ড এর ফ্লোটিং মার্কেট এ যাবার জন্য হা পিত্যস করছেন তারা একবার ঘুরে আসতে পারেন বরিশালের ব্যাকওয়ারটার ও স্বরুপকাঠির ফ্লোটিং পেয়ারা মার্কেট এ। সবুজ যে কতোটা সবুজ হতে পারে, প্রকৃতি যে কতোটা সুন্দর হতে পারে এখান গেলে জানবেন।

এবার একটি তথ্য বাংলাদেশে উতপাদিত মোট পেয়ারার প্রায় ৮০ ভাগই উতপাদিত হয় স্বরুপকাঠি জেলার বিভিন্ন গ্রামে।আটগর, কুরিয়ানা, ডুমুরিয়া, বেতরা, ডালুহার, সদর ইত্যাদি এলাকার প্রায় ২৪,০০০ একর জমিতে পেয়ারার চাষ হয়। আর সে পেয়ারার বেচাকেনা নিয়ে স্বরুপকাঠির ভিমরুলীতে গড়ে উঠেছে বিশাল পেয়ারার ভাসমান বাজার।

কি করে যাবেন : একদম সোজা। ঢাকা থেকে প্রতিদিসৎন সন্ধ্যা ৭.৩০ মিনিটে হুলারহাট এর উদ্দেশ্যে ৩-৪ টি লঞ্চ ছেড়ে যায়। ভাড়া ডেক-২০০ টাকা, কেবিন : ৯০০ টাকা। এতে উঠে নেছারাবাদ বা স্বরুপকাঠি নামবেন। তারপর একটা ট্রলার ভাড়া নেবেন ৫-৬ ঘন্টার জন্য। বলবেন নেছারাবাদ খাল হয়ে আটঘর, কুরিয়ানা ঘুরে ভিমরুলি বাজার যেতে। ভিমরুলি বাজারে গিয়ে দেখবেন খালের মধ্য অনেক পেয়ারার নৌকা। ইচ্ছে করতে কিনতে পারবেন পেয়ারা।

আরেকটি রুটেও যাওয়া যায়। সেটা হলো বরিশাল গিয়ে সেখান থৈকে অটোতে জগদিশপুর নামের একটা জায়গায় যেতে হবে। এরপর ট্রলারের করে একই নিয়মে ঘোরাঘুরি।

এরপর আবার খানিকটা ঘুরে কুরিয়ানা বাজারে লাঞ্চ করতে পারেন। কুরিয়ানা থেকে ভ্যানে করে রায়েরহাট আসলেই বরিশাল যাবার বাস পাবেন।পখে গুঠিয়া মনজিদ নেমে আবার অন্য বাসে বরিশাল গিয়ে ঢাকার লঞ্চ ধরতে পারবেন। (সংগ্রহীত)

ছুটিতে দেশ ভ্রমন


যারা সমুদ্র দেখতে পছন্দ করেন, তাদের সবার আগে যাওয়া উচিত কক্সবাজার। এটি পৃথিবীর সর্ববৃহৎ সমুদ্রসৈকত। এর পাশেই আছে সেন্টমার্টিন দ্বীপ। অথবা যেতে পারেন সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের দেশ কুয়াকাটায়। ঢাকা থেকে রাতের বাসে কক্সবাজার গিয়ে সারাদিন থেকে আবার রাতে ফেরা যাবে ঢাকার উদ্দেশে। তবে সেন্টমার্টিন গেলে আরও একদিন সময় লাগবে। আর কুয়াকাটা গিয়ে এতো কম সময়ে ফেরা যাবে না। কারণ কুয়াকাটা যেতে হলে প্রথমে লঞ্চে বা বাসে যেতে হবে পটুয়াখালী। তারপর সেখান থেকে লোকাল বাসে কুয়াকাটা। তাই সেখানে যেতেই অনেক সময় লাগবে। অন্যদিকে পাহাড় যাদের কাছে টানে, তারা যেতে পারেন রাঙ্গামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি। পাহাড়, অরণ্য আর আদিবাসীদের বর্ণিল সাজে সজ্জিত এ জনপদ।

এছাড়া সমুদ্র কিংবা পাহাড় যারা এড়িয়ে চলেন, তারা যেতে পারেন বনবাদাড়ে। আর বন দেখতে হলে প্রথমে আসতে পারেন সুন্দরবনে। এটি বিশ্বের একক বৃহৎ ম্যানগ্রোভ বন। ঢাকা থেকে প্রথমে খুলনা, তারপর সেখান থেকে বিভিন্ন ভ্রমণ পরিচালনাকারী সংস্থার মাধ্যমে প্রবেশ করতে পারেন সুন্দরবনে। এছাড়া একা একা দিনে দিনে সুন্দরবনের স্বাদ পেতে যেতে পারেন করমজল। মংলাঘাট থেকে ট্রলারে করমজল যেতে সময় লাগবে প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা। এছাড়া বিভিন্ন ভ্রমণ পরিচালনাকারী সংস্থার মাধ্যমে ঢাকা থেকেও সরাসরি আপনি সুন্দরবনের উদ্দেশে আসতে পারেন। অনেকেই ভাবেন, দেশের যে কোনো স্থানেই একা একা যাওয়া গেলে সুন্দরবন কেন যাওয়া যাবে না। তাদের ধারণা ভুল। কারণ সুন্দরবনের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানগুলো দেখতে হলে আপনাকে কমপক্ষে তিন-চারদিন সময় নিয়ে সুন্দরবনে প্রবেশ করতে হবে। আর সুন্দরবনে কখনও যে কোনো নৌকা বা ট্রলার নিয়ে একা একা প্রবেশ করা যায় না। তাই সুন্দরবনের মূল অংশে আপনাকে যেতে হলে ভ্রমণ পরিচালনাকারীদের সাহায্য নিতে হবে। অথবা নিজেদের ভাড়া করা লঞ্চেই যেতে হবে। এছাড়া লঞ্চ ছাড়া বন বিভাগ আপনাকে সুন্দরবনে একা একা প্রবেশের অনুমতিও দেবে না।

বন, সমুদ্র বা পাহাড় দেখা যাদের আছে, তারা আসতে পারেন সবুজ চা বাগান দেখতে। সিলেট বিভাগজুড়ে রয়েছে অসংখ্য চা বাগান। তবে সবচেয়ে বড় ও বেশি চা বাগান রয়েছে মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলায়। রাতের ট্রেনে বা বাসে রওনা হয়ে সকালে নেমে সারাদিন চা বাগান দেখে আবার রাতে ফেরা যাবে ঢাকায়। চাইলে শ্রীমঙ্গল দিনে দিনে গিয়েও দেখে আসা যাবে। দেশের বিখ্যাত হাওরগুলোও রয়েছে এ চায়ের দেশে। হাকালুকি, টাঙ্গুয়া, পাশুয়া, বাইক্কাসহ বিভিন্ন হাওরও দেখে আসতে পারেন সিলেট অঞ্চলে গেলে। এছাড়া সিলেট অঞ্চলজুড়েও রয়েছে ছোট-বড় অসংখ্য অরণ্য। যেখানে ঘুরে পেতে পারেন বাড়তি আনন্দ। আর ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা বা পুরাকীর্তি দেখার জন্য আছে খুলনার ষাটগম্বুজ মসজিদসহ বিভিন্ন মসজিদ, দিনাজপুরের কান্তিজিউর মন্দির, কুমিল্লার ময়নামতি, পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার, বগুড়ার মহাস্থানগড়, ফরিদপুরের মথুরা দেউর, রাজশাহীর সোনামসজিদ, তোহাখানা, পুঠিয়া রাজবাড়ী, নাটোরের রাজবাড়ী, জমিদারবাড়ী, গণভবনসহ দেশের বিভিন্ন পুরাকীর্তির নিদর্শন।

মধুটিলা ইকোপার্ক


পাহাড়ের চূড়ায় সাইট ভিউ টাওয়ারে উঠলেই চোখ জুড়িয়ে যায় সীমান্ত পেরিয়ে উঁচু উঁচু পাহাড় আর সবুজ অরণ্যের মনোরম দৃশ্য দেখে। দূরের অরণ্যকে একটু কুয়াশাচ্ছন্ন মনে হলেও এর সৌন্দর্যের কোনো কমতি নেই। গারো পাহাড়ের আঁকাবাঁকা উঁচু-নিচু পথ পেরিয়ে যত দূর এগোনো যায়, ততই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সমারোহ। শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার পোড়াগাঁও ইউনিয়নে এই মধুটিলা ইকোপার্কটির অবস্থান।

পার্কের গেট পেরিয়ে ভেতরে ঢুকতেই নজরে পড়বে উঁচু গাছের সারি। রাস্তা থেকে ডান পাশে খোলা প্রান্তর আর দুই পাশে রকমারি পণ্যের দোকান। রেস্তোরাঁ পেরোলে পাহাড়ি ঢালুর আঁকাবাঁকা রাস্তা। পাহাড়ের প্রবেশপথেই অভ্যর্থনা জানাবে ধূসর রঙের বিশাল আকৃতির শুঁড় উঁচানো পাথরের তৈরি দুটি হাতি।

এরপর যত এগোনো যাবে, ততই মন ভরে যাবে প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যে। পথে বুনো গাছপালার ফাঁকে ফুটে আছে হরেক রকমের বুনোফুল, তাতে বাহারি প্রজাপতির ওড়াউড়ি। এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ে যাওয়ার পথে ঝোপঝাড়ে দেখা মিলবে হরিণ, রয়েল বেঙ্গল টাইগার, সিংহ, বানর, বিভিন্ন প্রজাতির পাখি, হ্রদের ধারে কুমির, ব্যাঙ আর মৎস্যকন্যার অতি চমৎকার সব ভাস্কর্য। আঁকাবাঁকা উঁচু-নিচু পথে ঘন ঘন গাছের সারি গভীর অরণ্যের দিকে চলে গেছে। এখানে উঁচু পাহাড়ের গাছের ছায়ায় বসে কাটানো যাবে দুপুর ও বিকেল।

ইকোপার্কে ঢুকতে জনপ্রতি পাঁচ টাকায় টিকিট কাটার ব্যবস্থা রয়েছে। রয়েছে আলাদা ফি দিয়ে হ্রদে প্যাডেল বোট চালিয়ে ঘুরে বেড়ানোর সুযোগ। ওয়াচ টাওয়ারে উঠে ভারতে অবস্থিত উঁচু উঁচু পাহাড় আর সীমান্তবর্তী সবুজ গারো পাহাড় দেখতে পাবেন। ভাগ্য ভালো হলে ওয়াচ টাওয়ার থেকেই মিলতে পারে বুনোহাতির দলের দেখা। তারা সাধারণত শেষ বিকেলে অথবা সন্ধ্যায় গভীর অরণ্য থেকে নেমে আসে।

বিভিন্ন রাইড নিয়ে সম্পূর্ণ আলাদা করে গড়ে তোলা হয়েছে শিশুদের খেলাধুলা ও বিনোদনের জন্য শিশুপার্ক। এখানে ভ্রমণপ্রিয়দের দিনের বেলায় ব্যবহারের জন্য রয়েছে পাহাড়ের চূড়ায় মহুয়া রেস্টহাউস। এটি ব্যবহার করতে চাইলে ময়মনসিংহ অথবা শেরপুর বন বিভাগের অফিসে যোগাযোগ করতে হবে। এ ছাড়া এখানে রয়েছে ডিসপ্লে মডেল, তথ্যকেন্দ্র, গাড়ি পার্কিং জোন, ক্যানটিন, মিনি চিড়িয়াখানা। ঔষধি ও সৌন্দর্যবর্ধক প্রজাতির বৃক্ষ, মৌসুমি ফুলসহ বিভিন্ন রঙের গোলাপের বাগান। রয়েছে বেশ কয়েকটি পিকনিক স্পটও। পার্কটিতে জীববৈচিত্র্য ও প্রাণীর সমাহারও চোখে পড়বে।

যেভাবে আসবেনঃ
ঢাকা থেকে মধুটিলা ইকোপার্কের দূরত্ব প্রায় ২০০ কিলোমিটার। ঢাকার মহাখালী বাসস্ট্যান্ড থেকে ময়মনসিংহ হয়ে শেরপুরে আসতে হবে। শেরপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে নালিতাবাড়ী উপজেলার নন্নী বাজার পর্যন্ত লোকাল বাস সার্ভিস রয়েছে। নন্নী বাজার থেকে রিকশা, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, মোটরসাইকেল ভাড়ায় পাওয়া যায়। শেরপুর থেকে ভাড়ায় মাইক্রোবাস, অটোরিকশা অথবা মোটরসাইকেলে মধুটিলা ইকোপার্কে আসা যাবে। অথবা ঢাকার মহাখালী বাসস্ট্যান্ড থেকে সরাসরি নালিতাবাড়ী পর্যন্ত গেটলক সার্ভিস রয়েছে। জনপ্রতি ভাড়া ২০০ টাকা। নালিতাবাড়ী থেকে অটোরিকশা, মোটরসাইকেলে ২০-২৫ মিনিটে মধুটিলায় যাওয়া যায়। ঢাকা থেকে দিনে এসে দিনেই ফিরে যাওয়া যায়।

ঘুরে আসুন পানাম নগর


ঢাকার অদূরে ২৭ কি.মি দক্ষিণ-পূর্বে নারায়নগঞ্জ এর খুব কাছে সোনারগাঁতে অবস্থিত এই নগর। সোনারগাঁ লোক ও কারুশিল্প জাদুঘর থেকে উত্তর দিকে হাঁটাপথেই পৌঁছানো যায় অর্ধ্বচন্দ্রাকৃতি পানাম পুলে(যদিও পুলটি ধ্বংস হয়ে গেছে), এই পুল পেরিয়েই পানাম নগর এবং নগরী চিরে চলে যাওয়া পানাম সড়ক। আর সড়কের দুপাশে সারি সারি আবাসিক একতলা ও দ্বিতল বাড়িতে ভরপুর পানাম নগর। 

পানাম নগরের বিক্ষিপ্ত নিদর্শনাদি থেকে প্রতীয়মান হয় যে, এটি পূর্বে মেঘনা, পশ্চিমে শীতলক্ষ্যা, দক্ষিণে ধলেশ্বরী ও উত্তরে ব্রহ্মপুত্র নদ দ্বারা বেষ্টিত একটি বিস্তৃত জনপদ ছিল।এখানে কয়েক শতাব্দী পুরনো অনেক ভবন রয়েছে, যা বাংলার বার ভূইয়াঁদের ইতিহাসের সাথে সম্পর্কিত। সোনারগাঁর ২০ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে এই নগরী গড়ে ওঠে।
১৪০০ শতাব্দীতে এখানে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয় যেখানে পৃথীবির নামি-দামি শিক্ষকরা পড়াতে আসতেন।
১৫ শতকে ঈসা খাঁ বাংলার প্রথম রাজধানী স্থাপন করেছিলেন সোনাগাঁওয়ে। পূর্বে মেঘনা আর পশ্চিমে শীতলক্ষ্যা নদীপথে বিলেত থেকে আসতো বিলাতি থানকাপড়, দেশ থেকে যেতো মসলিন। শীতলক্ষ্যা আর মেঘনার ঘাটে প্রতিদিনই ভিড়তো পালতোলা নৌকা।
যে কেউ প্রাইভেটকার অথবা মাইক্রোবাস নিয়ে সরাসরি লোক ও কারুশিল্প জাদুঘরে যেতে পারবেন। আর যদি বাসে যেতে চান তাহলে গুলিস্তান থেকে বাসে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সোনারগাঁ মোগড়াপাড়া চৌরাস্তায় এসে নামতে হবে। সেখান থেকে রিকশা/অটোরিক্সাযোগ

সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়া হাওর


নীল আকাশ যেখানে পানির সঙ্গে খেলা করে, সাদা মেঘ যেখানে পাহাড়ের কোলে ঘুমায়, গাছের সারি যেখানে প্রতিনিয়ত সবুজ পানিতে গোসল করে, আর পানির নিচে যেন রঙিন বনের বসতি। সূর্যমামা আগে এখানে ওঠে, তারপর হাসে; তাড়াহুড়ো করে চাঁদ এসে জলের আয়নায় তার রূপ দেখে মুগ্ধ হয়ে থমকে দাঁড়ায়; ঢেউয়ের কোলে দুলতে দুলতে ঘুমিয়ে পড়ে তারার সারি। ভাবছেন কাল্পনিক কিছু বলছি? না, একদমই না - এই জায়গাটার নাম ‘টাঙ্গুয়া হাওর’। হ্যাঁ, আমাদের টাঙ্গুয়া হাওর।

সুনামগঞ্জের সাহেববাজার ঘাট থেকে ইঞ্জিন নৌকা চারপাশের চৌহদ্দি ছাড়ানো সবুজ দেখে আপনি ভুল করে ভেবে বসতে পারেন যে নিউজিল্যান্ডের কোথাও আছেন। সুরমা নদীর ওপারেই মেঘালয়ের পাহাড় মেঘ কোলে নিয়ে অতিথির জন্য বসে আছে। চোখের সামনে ঠিক যেন নিউজিল্যান্ডের ডেইরি ফার্মের গরুগুলো ঘাস খাচ্ছে। তাদের পেছনে বাঁক খেয়ে উঠে গেছে পাহাড়ের দেয়াল। যত দূর চোখ যায়, সবুজের মখমল। নিচে নীলচে পানি, পানির নিচে শেওলার অস্তিত্ব পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে। নলখাগড়ার ডগা ভেসে ভেসে ঢেউয়ের দোলায় নাচছে হাওরজুড়ে।

যাওয়ার পথে আনোয়ারপুর গ্রামে পড়ল পাথরের স্তূপ। এখানে পাথর ভাঙা হয়, হলদে বালির বিছানায় শুয়ে শুয়ে পাথরগুলো রোদ পোহাচ্ছে। যতই সময় যাচ্ছে, ধীরে ধীরে রং বদলাচ্ছে পানির। নীল থেকে কালো, কালো থেকে সবুজ, আবার গাঢ় নীল। এভাবে প্রায় ছয় ঘন্টা পর টাঙ্গুয়া হাওরে পৌঁছা যায়।

বর্ষা মৌসুমে গোটা টাঙ্গুয়াই পরিণত হয় ২০-২৫ ফুট জলের এক স্বচ্ছ অ্যাকুরিয়ামে। হঠাৎ করে কেউ দেখলে নির্দ্বিধায় বঙ্গোপসাগর ভেবে ভুল করবে। এই সেই টাঙ্গুয়া হাওর, যেখানে জল আকাশের রং চুরি করে নীলের ভুবন সাজিয়েছে। মেঘমালা অনেক নিচ দিয়ে উড়ে যায়, দূর থেকে দেখে মনে হবে পানিতে বুঝি তুলোর ভেলা ভাসছে। সীমাহীন এই হাওরে বর্ষাকালে চলে বিশাল ঢেউয়ের রাজত্ব। পানি এতই পরিষ্কার যে ২০ ফুট নিচের ঘাস, গাছ, লতাগুলো মনে হয় অ্যাকুরিয়ামে সাজানো। অচেনা এক পৃথিবী মনে হয় যখন দেখি কোনো রকম ভেলা বা জাহাজ ছাড়াই থইথই পানিতে পইপই ভাসছে ছোট ছোট গ্রাম।

পুরো হাওর গাছের সীমানা দিয়ে ঘেরা। সেই গাছও মাথাটুকু বাদে ডুবে আছে নীলের সমুদ্রে। এখানে বাতাস কখনো ক্লান্ত হয় না, এখানে আকাশের নিচে সাদা মেঘের বুক চিরে দাঁড়িয়ে আছে কচি পাহাড়, আর সেই পাহাড়ের কোলে নাচে উদ্দাম, উত্তাল, দুরন্ত সবুজ জ্যাকেট পরা নীল পানি, হাওরের পানি।

কীভাবে যাবেনঃ
ঢাকা থেকে সুনামগঞ্জ - শ্যামলী পরিবহনে ৪০০ টাকা ভাড়া নেবে। শ্যামলী আর ইউনিক ছাড়া অন্য কোনো বাস যায় না। সুনামগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড থেকে সাহেববাজার ঘাট পর্যন্ত রিকশায়। সেখান থেকে টাঙ্গুয়া হাওরের উদ্দেশ্যে ইঞ্জিনচালিত নৌকা ভাড়া করবেন, প্রতিদিনের জন্য ভাড়া নেবে তিন হাজার টাকা। হাওরে যেতে পাঁচ-ছয় ঘণ্টার মতো সময় লাগবে। দু-তিন দিনের জন্য নৌকা ভাড়া করলে প্রয়োজনীয় বাজারসদাই করে নেবেন। হাওর ঘুরে রাতটা তাহিরপুর থানার ডাকবাংলোতে থাকতে পারেন।

তাহিরপুরে রাতে থেকে পরদিন ট্যাকেরহাট, বারিক্কাটিলাসহ জাদুকাটা নদী ঘুরে সুনামগঞ্জ চলে আসতে পারেন। সুনামগঞ্জ থেকে ঢাকার উদ্দেশে বেলা আড়াইটায় একটা, এরপর রাত ১০ টায় অরেকটা গাড়ি ছাড়ে।

সঙ্গে তেমন কিছুই নিতে হবে না, তবে লাইফ জ্যাকেট থাকলে নিয়ে নিতে পারেন। এটা বর্ষাকালে যাওয়ার রাস্তা। শীতকালে নৌকা চলবে না, সে ক্ষেত্রে আপনাকে সুরমা নদী পার হয়ে মণিপুরিঘাট থেকে মোটরসাইকেলে শ্রীপুর বাজারে অথবা ডাম্পের বাজারে গিয়ে টাঙ্গুয়া হাওরে যেতে হবে।

বেহুলা-লখিন্দরের বাসরঘর


মা মনসার রোষানল একে একে কেড়ে নিয়েছে চাঁদ সওদাগরের সবক’টি সন্তান। বাকি কেবল লখিন্দর। কিন্তু তাঁকেও কেড়ে নেওয়ার সময় বেঁধে দিয়েছেন মনসা, ‘বাসররাতই হবে লখিন্দরের জীবনের শেষ রাত।’ কী করবেন চাঁদ সওদাগর? অনেক ভেবে লোহা দিয়ে নির্মাণ করলেন লখিন্দরের জন্য নিশ্ছিদ্র শয়নকক্ষ। কিন্তু তাতেও কি শেষ রক্ষা হলো? কোনো এক ফুটোপথে ঠিকই ঢুকে পড়লেন সাপের দেবী। সুযোগ বুঝে লখিন্দরের পায়ে ছোবল... দিশেহারা বেহুলা... মৃত স্বামীকে কলার ভেলায় তুলে তাঁর ইন্দ্রপুরীতে যাত্রা... নেচে গেয়ে খুশি করতে হবে ইন্দ্রকে...। সেই লখিন্দরের ভিটে কিন্তু এখনো মাথা উঁচু করে ঠায় দাঁড়িয়ে। অন্তত এলাকাবাসীর কাছে আজও তা বেহুলার বাসরঘর নামেই পরিচিত, বগুড়া শহর থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার দূরেই যার অবস্থান।

মূল স্থাপনাটি সমতল হতে বেশ উঁচু এবং বহু স্তরবিশিষ্ট একটি দুর্গ। প্রত্যেক স্তরেই অসংখ্য কক্ষ। সর্বমোট ১৭৮টি কক্ষ আছে এই দুর্গে। এতগুলোর মধ্যে কোনটি বেহুলার বাসরঘর ছিল তার সুনির্দিষ্ট তথ্যপ্রমাণ নেই। তা ছাড়া সব কটি কক্ষের আকৃতিগত কাঠামোও প্রায় একই রকম। দুর্গের একদম চূড়ায় ভিন্ন ধাঁচের একটি গোলাকৃতি কক্ষ রয়েছে এবং ধারণা করা হয় এটিই হয়তো বাসরঘর ছিল।

যেভাবে যাবেনঃ
বগুড়া শহর থেকে বাস অথবা সিএনজিচালিত অটোরিকশাযোগে আপনাকে নামতে হবে গোকুল বাজারে। তারপর সেখান থেকে ভ্যান অথবা রিকশায় অনায়াসে পৌঁছে যেতে পারবেন বেহুলার বাসরঘরে। রাতে থাকতে চাইলে ফিরে আসতে হবে বগুড়া শহরে। কেননা, এ এলাকার আশপাশে কোনো হোটেল বা মোটেল নেই।

শাহেনশাহ গুহার ভেতর-বাহির


শাহেনশাহ গুহায় ঢোকার মুখে পশ্চিমে বিশাল বঙ্গোপসাগর, পুবে উঁচু পাহাড়। মাঝখান দিয়ে চলে গেছে ‘কক্সবাজার-টেকনাফ’ মেরিন ড্রাইভ সড়ক। এই পথ ধরে কক্সবাজার শহর থেকে আট কিলোমিটার এগিয়ে গেলে নজরে পড়ে সবুজ-শ্যামলে ভরা একটি গ্রাম বড়ছড়া। এই বড়ছড়ার উঁচু-নিচু ৩৭ একরের বিশাল পাহাড় নিয়ে গড়ে উঠেছে পর্যটনের বিনোদন কেন্দ্র ‘দরিয়ানগর’।
কলাতলী সৈকত, ইনানী দেখা তো হলো অনেকবার। এবার ঘুরে আসতে পারেন দরিয়ানগর। রোমাঞ্চের স্বাদ পাবেন এখানেই।

শাহেনশাহ গুহা
দরিয়ানগরে উঁচু পাহাড়ের নিচে প্রায় আধ কিলোমিটার লম্বা আঁকাবাঁকা একটি সুড়ঙ্গ পথ, নাম শাহেনশাহ গুহা। এর একটু দক্ষিণে কিংবদন্তির ‘পরিমুড়া’, যাকে আমরা হিমছড়ি ঝরনা বলে জানি। কক্সবাজারের মানুষের মুখে ফেরে এ পরির গল্প। বানেছা পরির কন্যা হিমপরি নাকি সখীদের নিয়ে সমুদ্রস্নান সেরে এ পাহাড়ে আড্ডা দিতেন। তাই হিমপরির নামে জায়গার নামকরণ ‘হিমছড়ি’।
হিমপরির সঙ্গে মানুষের ভালোবাসার গল্পও শোনা যায় এই অঞ্চলের মানুষের কাছে।
একসময় এ হিমছড়িতে নাকি আরবের একটি বাণিজ্যতরী ডুবে গিয়েছিল। সেই তরীতে ছিলেন শাহেনশাহ নামের একজন তরুণ। তিনি এখানে ঝরনার মিষ্টি পানি খেতে এসে বন্য প্রাণীর কবলে পড়েন। আশ্রয় নেন এক গুহায়। সেই গুহারই পরে নাম হয় শাহেনশাহ গুহা। এক পূর্ণিমা রাতে শাহেনশাহর সঙ্গে দেখা হয় হিমপরির। দুজনের ভালোবাসার সে-ই শুরু। পরি তাঁকে নিয়ে চলে যান নিজ পূর্ণিমা রাতে শাহেনশাহর দেশে। এখানে রয়ে যায় হিমছড়ি আর শাহেনশাহ গুহা।

দরিয়া-দর্শন
গুহার ওপরে প্রায় ১০০ ফুট উঁচু পাহাড় চূড়ায় ছন আর কাঠ দিয়ে তৈরি ‘চেরাংঘর’ বা ‘আড্ডাখানা’। এখানে বসে দেখা যায় দরিয়া বা সমুদ্র-দর্শন। পাহাড় চূড়ায় দাঁড়ালে মনে হবে, যেন বঙ্গোপসাগরের নীল জলের ওপরই দাঁড়িয়ে আছেন। নজরে পড়বে দূরের সাগরের নৌকাগুলো। গভীর সাগর থেকে মাছ ধরে ফেরা ট্রলারের সারি।
এই পাহাড়ের নিচে রাত যাপনের জন্য রয়েছে বাংলো বা রেস্টহাউস। বাংলোর সামনে সূর্যাস্ত দেখার জন্য রয়েছে ‘সানসেট ভিউ পার্ক’। পার্কের নিচে অর্থাৎ পাহাড়ের খাদে প্রাকৃতিক পরিবেশে তৈরি করা হয় ১২টি কুঁড়ে। এখানে যে কেউ সপরিবারে রাত কাটাতে পারেন। রয়েছে একটি রেস্তোরাঁও, যাতে পাবেন নানা পদের মাছ।

জেনে নিন
কক্সবাজার শহর থেকে লোকাল বাসে দরিয়ানগরের ভাড়া ২০ টাকা। তারপর ২০ টাকার টিকিট কেটে কয়েক ঘণ্টার দরিয়ানগর পর্যটন কেন্দ্র ভ্রমণ। গাড়ি থেকে নেমে টিকিট কেটে বিশাল একটি হাঙরের মুখ দিয়ে দরিয়ানগরে প্রবেশ করতে হয়। এরপর পাকা সিঁড়ি বেয়ে পাহাড়ে ওঠা। মাঝেমধ্যে এক পাহাড় থেকে আরেক পাহাড়ে যাতায়াতের জন্য বাঁশের সাঁকো পাড়ি দিতে হবে।
পাহাড়ের নিচে শাহেনশাহ গুহায় প্রবেশের সময় একটু সতর্ক থাকতে হয়। পিচ্ছিল পাথরের ওপর দিয়ে হাঁটা-চলায় পা পিছলে পড়ে যেতে পারেন। বর্ষার সময় সাপের উপদ্রবও থাকে।
তবে গ্রীষ্ম ও শীতকালে গুহায় প্রবেশ নিরাপদ। গুহার শেষ প্রান্ত পর্যন্ত যেতে একাধিক ঝরনা নজরে পড়বে। এসব ঝরনার ঠান্ডা জলে শরীরটা ভিজিয়ে নিতে পারেন। গুহার ওপরের দিকে তাকালে মনে হতে পারে, এই বুঝি পাহাড়ের খাড়া মাটি মাথার ওপর এসে পড়ছে।

ঈদের ছুটিতে মধুচন্দ্রিমা


বান্দরবানের এই সবুজ প্রকৃতি চোখ জুড়িয়ে দেবে। চারদিকে পাহাড়, নৌকায় করে স্বচ্ছ পানির ওপর দিয়ে ছুটে চলা। মাঝেমধ্যে দু-একটি করে বক ও নাম না-জানা হরেক রকম পাখি উড়ে যাচ্ছে। কখনো কখনো দু-একটি গুইসাপ পানি সাঁতরে পার হচ্ছে। এর সঙ্গে রয়েছে মনোরম পরিবেশ। নির্জন জায়গায় সঙ্গীসহ আপনি। মধুচন্দ্রিমার কল্পনায় এমন জায়গাটাই তো মানানসই।

অন্য কোথাও
সঙ্গীসহ আপনি প্রচলিত বেড়ানোর জায়গার বাইরেও ঢাকার অদূরে সোনারগাঁ বারভুঁইয়াদের অন্যতম ঈশা খাঁর রাজধানী সোনারগাঁ ও পানামনগর দেখে আসতে পারেন।
ঢাকা বা ময়মনসিংহ থেকে রওনা হয়ে নেত্রকোনায় পৌঁছানোর আগে শ্যামগঞ্জ বাজার থেকে বাঁ দিকে চলে গেছে যে সড়কটি, সেটি দিয়েই যেতে পারেন বিরিশিরি বা সুসং দুর্গাপুর। সোমেশ্বরী নদীর পাড়ে পৌঁছালেই মনে হবে, এ এক ভিন্ন জগৎ।
যেতে পারেন রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিবিজড়িত শিলাইদহে। পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার আসলে নামেই পাহাড়, নওগাঁর বদলগাছী থানায় অবস্থিত এটি।
লালমাটিঘেরা ময়নামতি কুমিল্লা শহর থেকে প্রায় আট কিলোমিটার পশ্চিমে। এখানে রয়েছে বৌদ্ধবিহারের ধ্বংসাবশেষ এবং সেখান থেকে পাওয়া প্রত্নবস্তু। একই সঙ্গে পাহাড় আর জলের যুগলবন্দী চোখ জুড়িয়ে দেয়।

চেনাজানায়…
রাঙামাটি শহরটা এক দিনেই ঘুরে দেখা সম্ভব। বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিন। পানির স্বচ্ছতা ভেদ করে আপনি এখানে অসংখ্য প্রবাল দেখতে পাবেন। দ্বীপটিতে নারকেলগাছের আধিপত্যের কারণে একে নারকেল জিঞ্জিরাও বলা হয়। পানির স্বচ্ছতা এবং চারপাশের স্বর্গীয় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আপনাদের মুগ্ধ করবে। আঁকাবাঁকা পথ ধরে যেতে যেতে দেখবেন, একদিকে সুউচ্চ পাহাড়, অন্যদিকে গভীর খাদ। এই খাদের গভীর থেকে উঠে এসেছে নানা ধরনের গাছ। সবুজের এই বিপুল সমারোহ আপনার চোখকে দেবে প্রশান্তি, ভরিয়ে দেবে মন। এই হলো বান্দরবান। এ ছাড়া দেখার মতো বাংলাদেশে রয়েছে অনেক জায়গা। বিশ্বখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগার, চিত্রা হরিণের আবাস সুন্দরবন, পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার; পাহাড়পুর, মহাস্থানগড়, দিনাজপুরের স্বপ্নপুরী, রামসাগর, তেঁতুলিয়া, কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতের সূর্যোদয়-সূর্যাস্ত, রাঙামাটি, বান্দরবান, চিম্বুক পাহাড়, সেন্ট মার্টিন, সিলেটের চা-বাগান, মাধবকুণ্ডের ঝরনা, জাফলং, জৈন্তা, খাসিয়াপল্লী—এসব জায়গায় অথবা আপনার পছন্দের কোনো জায়গা থেকে বেড়িয়ে আসতে পারেন। রাঙামাটি বাংলাদেশের এক প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত এলাকা। শহর থেকে শুভলং ঝরনায় যাওয়া যায় নৌপথে। দুই উঁচু পাহাড়ের মাঝ দিয়ে নৌযান চলার সময় দূর পাহাড় থেকে আদিবাসী গ্রামগুলোকে ছবির মতো মনে হবে। রাঙামাটির প্রতি পদেই দেখতে পাবেন আদিবাসীদের প্রথাগত জীবনযাত্রা। কাপ্তাই জাতীয় উদ্যান, কর্ণফুলী পেপার মিল ও কর্ণফুলী পানিবিদ্যুৎকেন্দ্র। সেন্ট মার্টিন বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ। সেন্ট মার্টিনের কিছু দূরেই আছে ছেঁড়াদ্বীপ। পানির রং একদিকে নীল, তো কিছুটা পরেই মনে হয় সবুজ। এই শীতে নবদম্পতিরা মধুচন্দ্রিমা সেরে আসতে পারেন এসব জায়গায়। দেশের নানা স্থানে অনেক রিসোর্ট হয়েছে। বেসরকারি বা উন্নয়ন সংস্থার রেস্টহাউস বা বাংলো তো আছেই।

 এই পর্যটন মৌসুমে বিভিন্ন পর্যটন সংস্থা আয়োজন করেছে নানা ভ্রমণ প্যাকেজের।

দ্য গাইড ট্যুরস লিমিটেড
এ সংস্থার ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাসান মনসুর জানালেন তাঁদের প্যাকেজ সম্পর্কে। ১. ঢাকা-বান্দরবান-ঢাকা, কটেজে বাঁশের ঘরে। ২. ঢাকা-সুন্দরবন-ঢাকা, তিন দিন দুই রাত, ১০ হাজার থেকে ১৪ হাজার টাকা।
দ্য বেঙ্গল ট্যুরস লিমিটেড
এ প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মতিউর রহমান জানালেন তাঁদের প্যাকেজ সম্পর্কে। ১. ঢাকা-সুন্দরবন-ঢাকা, চার রাত তিন দিন, ১০ হাজার ৫০০ টাকা।
ফয়’স লেক রিসোর্ট
ফয়’স লেক রিসোর্টের জ্যেষ্ঠ বিপণন ব্যবস্থাপক ফারহানুল কে চৌধুরী জানালেন, প্রতি রাত যাপন চার হাজার থেকে আট হাজার ৫০০ টাকা এবং রিসোর্ট বাংলোয় প্রতি রাত চার হাজার ৫০০ থেকে ছয় হাজার টাকা।
রিভার অ্যান্ড গ্রিন ট্যুরস
এ প্রতিষ্ঠানের পরিচালক মহিউদ্দিন হেলাল জানান, ঢাকা-কক্সবাজার-ঢাকা, তিন রাত দুই দিন, ছয় হাজার ৫০০ টাকা। ঢাকা-সেন্ট মার্টিন-ঢাকা, তিন রাত দুই দিন পাঁচ হাজার ৯০০ টাকা। ঢাকা-সুন্দরবন-ঢাকা, চার রাত চার দিন, ১১ হাজার ৯০০ টাকা।
হাকিল ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেল
এ প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিজানুর রহমান জানান, তাঁরা মূলত টেইলর মেইড প্যাকেজ, অর্থাৎ ভ্রমণকারীর পছন্দমতো দেশে-বিদেশে যেকোনো ভ্রমণের আয়োজন করেন। আছে নবদম্পতিদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থাও।
সুন্দরবন ট্যুরস অ্যান্ড রিসোর্ট
এ প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সালেহ মাহমুদ মিঠু জানান, ঢাকা-কুয়াকাটা-শরণখোলা-কচিখালী-কটকা-ঢাকা পাঁচ দিন পাঁচ রাত, ১২ হাজার ৮০০ টাকা।
এসব প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব ওয়েবসাইট থেকে জেনে নিতে পারবেন আরও তথ্য।

নবাবগঞ্জ জাতীয় উদ্যান


স্থানীয়ভাবে পরিচিত পঞ্চবটীর বন নিয়ে নানান কাহিনীও প্রচলিত আছে।

দিনাজপুর জেলায় নবাবগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে প্রায় এক কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে এই উদ্যানের অবস্থান।
নবাবগঞ্জ বনবিটের জগন্নাথপুর, হরিল্যাখুর, বড় জালালপুর, আলোকধুতি, তর্পনঘাট, রসুলপুর ও খটখটিয়া কৃষ্টপুর মৌজা নিয়ে উদ্যান গঠিত। এই জাতীয় উদ্যান আসলে একটি শালবন। স্থানীয়ভাবে পঞ্চবটীর বন নামেও পরিচিত।
২০১০ সালের ২৪ অক্টোবর নবাবগঞ্জ বনবিটের এই অঞ্চলকে জাতীয় উদ্যান হিসেবে ঘোষণা করা হয়। আয়তন ৫১৭ দশমিক ৬১ হেক্টর বা ১২৭৮ দশমিক ৫০ একর।২০১০ সালে জাতীয় উদ্যানের মর্যাদা পেলেও এই বনাঞ্চল বেশ পুরানো। এ জঙ্গল নিয়ে নানান কাহিনীও প্রচলিত আছে স্থানীয়দের কাছে।
জানা যায়— কুশদহ, পার্বতীপুর, ফুলবাড়ী, বিরামপুর ও ঘোড়াঘাট পর্যন্ত এ বনের ৫টি শাখা ছিল। তাই এর আরেক নাম পঞ্চবটী। জনশ্রুতি আছে শিবের কৈলাশবাস আর সীতার বনবাস এই বনেই হয়েছিল। এছাড়া দস্যু রত্নাকর সিদ্ধিলাভ করে বাল্মীকি মুনিরূপে খ্যাতিলাভ করেন এই বনে।
নবাবগঞ্জ জাতীয় উদ্যানের প্রধান বৃক্ষ শাল ও সেগুন। এছাড়াও আছে গামার, ইউক্যালিপটাস, জাম, আকাশমনি ও নানান শ্রেণির অর্কিড। বনের বাসিন্দা বন্যপ্রাণীর মধ্যে আছে বনবিড়াল, শিয়াল, মেছো বাঘ, নানান রকম সাপ। নানান জাতের পাখিও আছে এ বনে।কীভাবে যাবেন
প্রথমে যেতে হবে দিনাজপুর জেলা শহর। সেখান থেকে বাসে চড়ে নবাবগঞ্জ উপজেলা সদরে। এরপর রিকশা কিংবা অটো রিকশায় যাওয়া যাবে নবাবগঞ্জ জাতীয় উদ্যানে।
রাজধানী থেকে দিনাজপুর সড়ক ও রেলপথে যাওয়া যায়।
ঢাকা থেকে দিনাজপুরগামী বাসগুলো সাধারণত ছাড়ে গাবতলী ও কল্যাণপুর থেকে। এ পথে নাবিল এন্টারপ্রাইজের এসি বাস চলাচল করে। ভাড়া ১ হাজার টাকা।এছাড়া হানিফ এন্টারপ্রাইজ, শ্যামলী পরিবহন, নাবিল এন্টারপ্রাইজ, বাবলু এন্টারপ্রাইজ, কেয়া পরিবহন,  সেফ লাইনের নন এসি বাস চলাচল করে এ পথে। ভাড়া ৬শ’ থেকে সাড়ে ৬শ’ টাকা।
ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে আন্তঃনগর ট্রেন দ্রুতযান এক্সপ্রেস ছাড়ে সন্ধ্যা ৭টা ৪০ মিনিটে। আর আন্তঃনগর একতা এক্সপ্রেস ছাড়ে সকাল ৯টা ৪০ মিনিটে। ঢাকা থেকে একতা ও দ্রুতযান এক্সপ্রেস বন্ধ যথাক্রমে মঙ্গল ও বুধবার।
ভাড়া শোভন সিট ৩৬০ টাকা। শোভন চেয়ার ৪৩০ টাকা। প্রথম শ্রেণি চেয়ার ৫৭০ টাকা। প্রথম শ্রেণি বার্থ ৮৫৫ টাকা।
দিনাজপুর থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে দ্রুতযান এক্সপ্রেস ছাড়ে সকাল ৭টা ৪০ মিনিটে আর একতা এক্সপ্রেস ছাড়ে রাত ৯টা ২০ মিনিটে। দিনাজপুর থেকে একতা ও দ্রুতযান এক্সপ্রেসের বন্ধ যথাক্রমে সোমবার ও বুধবার।
কোথায় থাকবেন
দিনাজপুর শহরে থাকার জন্য ভালো মানের হোটেল হচ্ছে পর্যটন মোটেল (০৫৩১-৬৪৭১৮)। এছাড়া ঢাকায় পর্যটনের প্রধান কার্যালয় থেকেও এই মোটেল বুকিং দেওয়া যায়। ফোন- ৯৮৯৯২৮৮-৯১।দিনাজপুরের পর্যটন মোটেলে এসি টুইনবেড ১ হাজার ৯শ’ টাকা এবং এসি ডিলাক্স টুইনবেড ২ হাজার ৩শ’ টাকা। ইকনোমি বেড ৪শ’ টাকা, ইকনোমি কাপল বেড ৭শ’ টাকা।
এছাড়া দিনাজপুরের অন্যান্য সাধারণ মানের  হোটেলে ১শ’ থেকে ১ হাজার ২শ’ টাকায় রাত্রিযাপনের ব্যবস্থা আছে। কয়েকটি সাধারণ মানের হোটেল হল- মালদহ পট্টিতে হোটেল ডায়মন্ড,  নিমতলায় হোটেল আল রশিদ, হোটেল নবীন, হোটেল রেহানা, নিউ হোটেল।
প্রয়োজনীয় তথ্য
নবাবগঞ্জ জাতীয় উদ্যান বেশ নির্জন। পর্যটন সুবিধা এই বনে নেই বললেই চলে। ভ্রমণে গেলে দলবলে যাওয়া উচিৎ।

দূর পাহাড়ের দেশে ভ্রমনে গেলে যে ৬টি দর্শনীয় স্থান মিস করা একদম ঠিক হবে না


লোকালয় ছেড়ে, দূর পাহাড়ের দেশে হারিয়ে যেতে কার না মন চায়! নৈসর্গিক সৌন্দর্যের অপার লীলাভূমি রাঙ্গামাটি জেলায় ঘুরে বেড়াতে তোমারও নিশ্চয় মন চাইছে? প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য ঘেরা রাঙ্গামাটি জেলায় রয়েছে, পাহাড়ের কোল ঘেঁসে ঘুমিয়ে থাকে শান্ত জলের হ্রদ। যেখানে সীমানার ওপাড়ে নীল আকাশ মিতালী করে হ্রদের সাথে, চুমু খায় পাহাড়ের বুকে। সারাক্ষণ চলতে থাকে পাহাড়, নদী আর হ্রদের এক অপূর্ব মিলনমেলা। রাঙ্গামাটির প্রতিটি পরতে পরতে লুকিয়ে আছে অদেখা এক ভূবন যেখান আপনার জন্য অপেক্ষা করছে নয়ানাভিরাম দৃশ্যপট। রাঙ্গামাটির এই দৃশ্যপটে মুগ্ধ হয়ে দূর পাহাড়ের দেশে ভ্রমনে গেলে যে ৬টি দর্শনীয় স্থান মিস করা একদম ঠিক হবে না সেসব স্থান নিয়েই আজকের আলোচনা।

১. কাপ্তাই হ্রদ
রাঙ্গামাটির দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে কাপ্তাই হ্রদ ভ্রমন অন্যতম। কর্ণফুলী নদীতে বাঁধ নির্মানের ফলে সৃষ্টি হয় সুবিশাল কাপ্তাই হ্রদ। মূলত পানি বিদ্যুত উৎপাদনের জন্য এই বাঁধ নির্মিত হয়। অসংখ্য পাহাড়ের কোল ঘেঁষে বয়ে চলা আঁকাবাঁকা বিশাল কাপ্তাই হ্রদে নৌবিহারে অনুভূতি এক অনন্য অভিজ্ঞতা। দেশীয় ইঞ্জিন নৌকা,লঞ্চ, স্পিডবোটে দিনভর নৌবিহার করা যেতে পারে। মজার ব্যাপার হলো আপনি চাইলে এই হ্রদ ঘুরতে ঘুরতেই দেখে ফেলতে পারবেন রাঙ্গামাটির অন্যান্য দর্শনীয় স্থানগুলো।

২.  সুবলং ঝরনা
বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের প্রতীক হয়ে যে কয়েকটি পাহাড়ি ঝর্ণা বা ঝিরি রয়েছে তার মধ্যে রাঙ্গামাটির বরকল উপজেলায় অবস্থিত সুবলং ঝর্ণা অন্যতম। মূলত পাহাড়ী সবুজের মাঝে বিস্ময় হয়ে থাকা এই ঝর্ণাটি তার উচ্চতা ও অবিরাম জলস্রোতের কারণেই পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে। যদিও একথা সত্য যে, বাংলাদেশের অন্য অনেক ঝর্ণার মতো সুবলংয়ের এই ঝর্ণাটিও তার প্রকৃত রূপের পসরা সাজায় বর্ষার সময়টাতেই। এ সময় প্রায় ৩০০ ফুট উঁচু থেকে সশব্দে পাহাড়ি এই জলধারা নেমে আসে সমতলে।

৩. ঝুলন্ত সেতু
রাঙ্গামাটি শহরের শেষ প্রান্তে কাপ্তাই হ্রদের তীর ঘেঁষে অবস্থিত সরকরি পর্যটন মোটেল। পর্যটকদের জন্য খুবই দৃষ্টিকাড়া ও আকর্ষনীয় স্থান এটি। পর্যটন মোটেলেই অবস্থিত ঝুলন্ত ব্রিজটি, যা পর্যটন এলাকাকে আরও বেশি সুন্দর ও দৃষ্টিনন্দিত করেছে। সহজেই পর্যটকদের দৃষ্টি কাড়ে এটি। পর্যটকদের প্রধান আকর্ষনের কারনে এবং এর নির্মানশৈলির কারনে ঝুলন্ত ব্রিজ আজ রাঙ্গামাটির নিদর্শন হয়ে দাড়িয়ে আছে। পর্যটকরা সাধারণত প্রথমেই এই পর্যটন মোটেল এবং ঝুলন্ত ব্রিজে আসে। এখান থেকে শুরু হয় রাঙামাটি ভ্রমণ।

. পেদা টিং টিং + চাং পাং
কাপ্তাই হ্রদের চারিদিকে কেবল পাহাড় আর হ্রদ, যেন প্রকৃতির মাঝে আপিন এক আগন্তুক মাত্র। বুনো প্রকৃতি ছাড়া আর কিছুই আশা করা যায় না এখানে। কিন্তু আপনি অবাক হবেন যখন চলতি পথে কোন একটি টিলার উপর দেখবেন পেদা টিং টিং এবং চাং পাং। এমন এক পরিবেশে যেখানে আপনি এক গ্লাস খাবার পানি পাবেন না, সেখানে এই দুইটি রেষ্টুরেন্ট আপনার জন্য চা, কফি আর চিকেন ফ্রাই নিয়ে অপেক্ষা করছে। সত্যিই হতবাক করার মত ব্যাপার। এছাড়াও এখানে পাবেন স্থানীয় খাবার "বিগল বিচি", "কচি বাঁশের তরকারী", "কেবাং"। পেদা টিং টিং একটা চাকমা শব্দগুচ্ছ, যার অর্থ হচ্ছে পেট টান টান। অর্থাৎ মারাত্মকভাবে খাওয়ার পর পেটের যে টান টান অবস্থা থাকে, সেটাকেই বলা হয় পেদা টিং টিং। রাঙ্গামাটি শহর থেকে মাত্র ৪-৫ কিলোমিটার দূরে কাপ্তাই হ্রদের ভসমান একটি পাহাড়ে অবসথিত এই পর্যটন সংস্থা। এখানে রেস্তোরা, কটেজ, নৌবিহার ব্যবস্থা, সেগুন বাগান ও অসংখ্য বানর রয়েছে।

৫.রাজবন বিহার
রাজবন বিহার বাংলাদেশে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের বৃহত্তম বিহার রাঙামাটি শহরের অদূরেই অবস্থিত। ১৯৭৭ সালে বনভান্তে লংদু এলাকা থেকে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য রাঙামাটি আসেন। বনভান্ত এবং তাঁর শিষ্যদের বসবাসের জন্য ভক্তকূল এই বিহারটি নির্মান করে দেন। চাকমা রাজা দেবাশিষ রায়ের তত্ত্বাবধানে রাজবন বিহার রক্ষণাবেক্ষনের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়েছে। এখানে আপনি যা যা দেখতে পাবেন...

৬. চাকমা রাজার বাড়ি
রাজবন বিহারের পাশেই রয়েছে চাকমা রাজার বাড়ি। চারপশে হ্রদ দ্বারা বেষ্টিত এই রাজবাড়িতে রয়েছে কাচারি, রাজ কার্যালয়, রাজার বাসভবন, চাকমা রাজা কর্তৃক উদ্ধারকৃত মোঘল আমলের ফঁতে খার সজ্জিত কামান, সবুজ ঘন বাঁশঝাড় ও আরও অনেককিছু।

ট্রাভেল প্রিয় বন্ধুরা, তাহলে আজকেই বেরিয়ে পড় পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটির উদ্দেশ্যে আর তোমার দুঃসসাহসিক ভ্রমনের ভাললাগা আমাদের সাথে শেয়ার কর। শুভ হোক তোমার ভ্রমনের দিন গুলি.. এই শুভ কামনা রইল।

Saturday, April 11, 2015

মহাস্থানগড় ভ্রমনে গিয়ে যে ৭টি দর্শণীয় স্থান কখনোই মিস করবেন না


মহাস্থানগড় প্রাচীন বাংলার অন্যতম একটি প্রত্নতাত্ত্বিক ও ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ স্থান। মহাস্থানগর হচ্ছে বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রাচীন নগরী। এক সময় এই নগরীটি প্রাচীন বাংলা রাজধানী ছিল। পূর্বে এর নাম ছিল পুন্ড্রবর্ধন ও পুণ্ড্রনগর। প্রাচীন ইতিহাস, ঐতিহ্য, দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রাচীন নগররাষ্ট্র এবং তার ধ্বংসাবশেষ ও প্রত্নস্থল হিসাবে সমগ্র বিশ্বের পর্যটক এবং প্রত্নতাত্ত্বিকদের কাছে মহাস্থানগড় আকর্ষণীয় ভ্রমন স্পট। প্রাচীন এই পর্যটন কেন্দ্রটি দেখার জন্য প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটক বগুড়ার মহাস্থানগড়ে ভিড় জমান। তবে মহাস্থানগড় নামক প্রাচীন এই নগরীকে ঘিরে অনেক গুলো দর্শণীয় স্থান  রয়েছে যার মধ্যে বিশেষ কিছু স্থান রয়েছে যা না দেখলে মহাস্থানগড় ভ্রমন অপূর্ণ থেকে যাবে। মহাস্থানগড় ভ্রমনে গিয়ে যে ৭টি দর্শণীয় স্থান কখনোই মিস করা ঠিক হবেনা  তা নিয়েই আজকের এই আলোচনা ....

মহাস্থানগড়ের দর্শণীয় ৭টি স্থানঃ

১. মাহী সওয়ার মাজার শরীফ:

মহাস্থানগড় বাস স্ট্যান্ড থেকে কিছুটা পশ্চিমে একটি ঐতিহাসিক মাজার শরীফ রয়েছে। পীরজাদা হযরত শাহ সুলতান মাহমুদ বলখী (র:) কে কেন্দ্র করে প্রাচীন এই মাজার শরীফটি গড়ে ওঠেছিল। কথিত আছে মাছের পিঠে আরোহন করে তিনি বরেন্দ্র ভূমিতে আসেন। তাই তাকে মাহী সওয়ার বলা হয়। প্রচলিত এক গল্প থেকে জানা যায়, হযরত মীর বোরহান নামক একজন মুসলমান এখানে বাস করতেন। পুত্র মানত করে গরু কোরবানী দেয়ার অপরাধে রাজা পরশুরাম তার বলির আদেশ দেন এবং তাকে সাহায্য করতেই মাছের পিঠে আরোহন করে মাহী সওয়ারেরর আগমন ঘটে।

২. কালীদহ সাগর:
গড়ের পশ্চিম অংশে রয়েছে ঐতিহাসিক কালীদহ সাগর এবং পদ্মাদেবীর বাসভবন। কালীদহ সাগর সংলগ্ন ঐতিহাসিক গড় জড়িপা নামক একটি মাটির দূর্গ রয়েছে। প্রাচীন এই কালীদহ সাগরে প্রতিবছরের মার্চ মাসে হিন্দু ধর্মালম্বীদের রারুন্নী স্নান অনুষ্ঠিত হয়। স্নান শেষে পুণ্যার্থীগণ সাগরপাড়ে গঙ্গাপূজা ও সংকীর্তন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন।

৩. শীলাদেবীর ঘাট:
গড়ের পূর্বপাশে রয়েছে করতোয়া নদী এর তীরে ‘শীলাদেবীর ঘাট’। শীলাদেবী ছিলেন পরশুরামের বোন। এখানে প্রতি বছর হিন্দুদের স্নান হয় এবং একদিনের একটি মেলা বসে।


৪. জিউৎকুন্ড কুপ:
মহাস্থান গড়ের শীলাদেবীর ঘাটের  পশ্চিমে জিউৎকুন্ড নামে একটি বড় কুপ আছে। কথিত আছে এই কুপের পানি পান করে পরশুরামের আহত সৈন্যরা সুস্থ হয়ে যেত। যদিও এর কোন ঐতিহাসিক ভিত্তি পাওয়া যায়নি।

৫. জাদুঘর:

মহাস্থান গড় খননের ফলে মৌর্য, গুপ্ত, পাল ও সেন যুগের বিভিন্ন দ্রব্যাদিসহ অনেক দেবদেবীর মূর্তি পাওয়া গেছে যা গড়ের উত্তরে অবস্থিত জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে। মহাস্থান গড় ছাড়াও আরও বিভিন্ন স্থানের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন এখানে সংরক্ষিত আছে।

৬. বেহুলার বাসর ঘর:

মহাস্থানগড় বাস স্ট্যান্ড থেকে প্রায় ২কি.মি দক্ষিণ পশ্চিমে একটি বৌদ্ধ স্তম্ভ রয়েছে যা সম্রাট অশোক নির্মাণ করেছিলেন বলে মনে করা হয়। স্তম্ভের উচ্চতা প্রায় ৪৫ ফুট। স্তম্ভের পূর্বার্ধে রয়েছে ২৪ কোন বিশিষ্ট চৌবাচ্চা সদৃশ একটি গোসল খানা । এটি বেহুলার বাসর ঘর নামেই বেশি পরিচিত।

৭. গোবিন্দ ভিটা:
মহাস্থানগড় জাদুঘরের ঠিক সামনেই গোবিন্দ ভিটা অবস্থিত। গোবিন্দ ভিটা একটি খননকৃত প্রত্নস্থল। গোবিন্দ ভিটা শব্দের অর্থ গোবিন্দ (হিন্দু দেবতা) তথা বিষ্ণুর আবাস। কিন্তু বৈষ্ণব ধর্মের কোনো নিদর্শন এ স্থানে পাওয়া যায়নি। তবুও প্রত্নস্থলটি স্থানীয়ভাবে গোবিন্দ ভিটা নামে পরিচিত।

বন্ধুরা মহাস্থানগড়ের ৭টি গুরুত্বপূর্ণ স্থান সম্পর্কে  জানানোর চেষ্টা করলাম। আশা করি, ভ্রমনে গিয়ে এবার আর এই ৭টি দর্শণীয় স্থান দেখতে ভুল করবেন না। আপনার ভ্রমন নিরাপদ ও আনন্দময় হোক এই শুভ প্রত্যাশা রইল। 

ট্রাভেল আরামদায়ক করতে ছোট্ট কিছু ট্রাভেল হ্যাক!


১। কাপড়গুলো রোল করে ব্যাগে রাখুন; যায়গা বাঁচবে।

২। জেটলেগ সমস্যা এড়াতে ভ্রমণের আগের দিন পর্যাপ্ত এক্সারসাইজ করুন।

৩। নেকলেস কিংবা হেডফোনের তার পেঁচিয়ে যাওয়া থেকে বাঁচতে স্ট্র এর ভেতর দিয়ে এভাবে রাখুন!



৪। আচমকা ঠাণ্ডার হাত থেকে বাঁচতে পাতলা স্কার্ফ কিংবা মাফলার সাথে রাখুন।

৫। জরুরি মুহুর্তের জন্য কিছু টাকা আলাদা করে লুকিয়ে রাখুন। সবখানে কার্ড পাঞ্চ করার সুবিধা আশা করা ঠিক হবেনা! (না)

৬। কাপড়ের ব্যাগে Dryer Sheet রাখুন; কাপড় থেকে সুগন্ধ ছড়াবে! (খুকখুকহাসি)

৭। রাস্তা হারিয়ে ফেললে কাছাকাছি কোন ফাস্ট ফুড ডেলিভারি প্লেসে ঢুঁ মারুন; কোথায় কিভাবে যেতে হয় এটা ওদের চাইতে ভালো কেউ জানে না! (আর গুগল ম্যাপ তো আছেই)

৮। ছোট-খাটো জিনিস রাখার জন্য ওষুধের বোতল সাথে রাখুন!

৯। শ্যাম্পু, কন্ডিশনার কিংবা অন্যান্য যেকোনো তরল বোতলের মুখ মাস্কিং টেপ দিয়ে পেঁচিয়ে রাখুন। তরল লিক হয়ে ব্যাগের ভেতরে বন্যা হওয়ার রিস্ক থেকে আপনি মুক্ত! (খুশীতেআউলা)

১০। জুতা, মুজা, স্যান্ডো গেঞ্জি কিংবা আন্ডার গার্মেন্টস এর মত কাপড়গুলো পরিষ্কার নাকি ময়লা বুঝতে পারছেন না? পাতলা প্লাস্টিক এর ব্যাগে ভরে ট্রাভেল ব্যাগের এক কোনায় রেখে দিন। আর স্যুটকেস প্যাক করার কার্যকর উপায় দেখতে পারেন এই ভিডিওতেঃ https://www.youtube.com/watch?v=HXj6Sz4eBUU

১১। বাইন্ডার ক্লিপ দিয়ে রেজর এর শার্প অংশটুকু আটকে ট্রাভেল ব্যাগে রেখে দিন; অসাবধানতায় ব্যাগের ভেতর কিছু কেটে যাওয়ার ভয় থাকবে না।

১২। অব্যবহৃত সানগ্লাস-এর খাপের ভেতর চার্জার/হেডফোন রাখুন। তারে গিট্টু লাগা আর নয়!

১৩। পুরানো আই-ড্রপারে টুথপেস্ট ভরে ট্রাভেল-সাইজ টুথপেস্ট-ড্রপার বানিয়ে নিন! কি দরকার অত বড় টুথপেস্ট টিউব সাথে রাখার?

* ইন্টারনেট অবলম্বনে

স্বপ্ন নয়, অথচ স্বপ্নের মতো সুন্দর নিরিবিলি এক নয়নাভিরাম মোহন-মায়াবী স্বপ্নময় ভুবন স্বপ্নপুরী


বিনোদনের অন্যতম স্থান উত্তরাঞ্চলের  স্বপ্নপুরী:

দিনাজপুর শহর থেকে ৫২ কিমি দক্ষিণে নবাবগঞ্জ উপজেলার আফতাবগঞ্জে স্বপ্নপুরী অবস্থিত। ১৯৮৯ সালে দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলার আফতাফগঞ্জে এক মৃত জলাশয়কে পিকনিক স্পটে রুপান্তরিত করে তার নাম দেওয়া হয় স্বপ্নপুরী। মোট ৪০০ বিঘা জমির উপরে নির্মাণ করা হয়েছে স্বপ্নপুরীর স্বপ্নের জগৎ। ঢাকা থেকে স্বপ্নপুরীর দূরত্ব ৩২০ কিলোমিটার ও দিনাজপুর থেকে মাত্র ৫২ কিলোমিটার। ১৯৯০ সাল থেকে এর বাস্তবায়ন শুরু হয়। ইচ্ছে হলে আপনি ইট-পাথরের যান্ত্রিক কর্মব্যস্ততা থেকে ক্লান্ত, বিপর্যস্ত দেহ-মনকে এই পিকনিক স্পষ্ট স্বপ্নপুরীতে ক্লান্তি জুড়াতে, আনন্দ-উল্লাস করে বিসর্জন দিতে পারেন মানসিক বিপর্যস্ততাকে। জানতে পারেন জীব-জগতের, উপলব্ধি করতে পারেন আপনজনদের। আত্মপলব্ধির মধ্য দিয়ে বিকাশ ঘটাতে পারেন মানবতার, অবারিত আত্মিক উন্নয়নের দ্বার সভ্যতাকে পরিপূর্ণ রূপ দিতে পারেন। দেশ-বিদেশের বহু বিশিষ্ট ব্যক্তি এই স্বপ্নপুরী দর্শনে মুগ্ধ হয়েছেন। 

সুবিশাল এলাকা, তুলনাহীন প্রাকৃতিক এবং নৈসর্গিক পরিবেশ। সমগ্র এলাকা জুড়ে রয়েছে বিভিন্ন প্রকার গোলাপ, ডালিয়া, চন্দ্রমল্লিকা, লিলি, রজনীগন্ধা, গ্লোবাল, কসমস, গাদা-সূর্যমুখী ইত্যাদি ফুলসহ বিভিন্ন প্রকার ঝাউগাছ, ইপিলইপিল, ক্যাকটাস, ওইপেং, ক্রিসমাসট্রি, ঘনসবুজ ঘাসে ঘেরা বাগানের গাছের ডালে বসেছে হাজারো পাখির মেলা, যা প্রকৃতি প্রেমিক সৌন্দর্যপিপাসু পর্যটক ও পরিব্রাজকদের মনোরঞ্জন এবং বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম হতে পারে।

শিক্ষামূলক ভ্রমণ স্বপ্নপুরী পর্যটন কেন্দ্র ছাত্রছাত্রী ও আনন্দ পিপাসুদের জন্য ভিন্ন মাত্রায় সজ্জিত। যার প্রমাণ স্বপ্নপুরীতে রয়েছে শিশু পার্ক, জীবন্ত এবং কৃত্রিম চিড়িয়াখানা। স্বপ্নপুরীর প্রবেশ দ্বারে দণ্ডায়মান বিশাল আকৃতির দুটি পরীর প্রতিকৃতি যেন পর্যটকদের স্বাগত জানাতে সদা প্রস্তুত।

ঝাউবীথি আর পাম বৃক্ষের মাঝে স্থাপিত মিলেনিয়াম ২০০০-এর প্রতীক। পর্যটকদের নামাজ পড়ার মসজিদ এবং কারুকার্যময় অজুখানা। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ও জাতীয় কবি নজরুলের ভাস্কর্য। চোখে স্বাপ্নিক বিস্ময়তা আর অন্তরে মুগ্ধতা নিয়ে স্বপ্নপুরীর লেকে স্পিড বোটে জলবিহারে মেতে ওঠা। লেকের ওপরে তৈরি করা হয়েছে কেবল কার। পর্যটকদের গোসল করার জন্য সুসজ্জিত শাপলা ঘাট। সুবিশাল স্বপ্নপুরীর স্থানে স্থানে রয়েছে চমৎকার চমৎকার বিশ্রাম ছাউনি। অপরূপ সৌন্দর্যমণ্ডিত স্বপ্নপুরী বাগানের ঘনপাতা, লতাগুল্ম উথিত ঢেউ বেষ্টনীর মাঝে বাগান বিলাসের সমারোহ। এ যেন নিপুণ হাতের পরশে বাগ-বাগিচার সৌন্দর্যে পেয়েছে নতুনরূপ। এসব বাগান মন-মননকে করে তোলে আকাশচারী ও স্বপ্নময়। 

স্বপ্নপুরীর রাস্তাগুলো একেকটি এক অভিন্ন। একটি রাস্তার দুই পাশে উদ্বাহু হংসমিথুনের দল। আরেকটি রাস্তার দু’পাশে মাছ আকৃতির ফুলের টপ দিয়ে সাজানো হয়েছে। কৃত্রিম চিড়িয়াখানায় প্রবেশের জন্য তৈরি করা হয়েছে চোখ ধাঁধানো রাস্তা। জীবন্ত চিড়িয়াখানায় প্রবেশের প্রধান ফটকটি বাংলার ঐতিহ্য, বিশ্বখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগারের মুখাকৃতির এ ফটক পর্যটকদের শিহরিত করে ও রোমাঞ্চিত করতে প্রস্তুত।

বাংলাদেশের কলা গাছের অনুুরূপ অতিথি বৃক্ষ পান্থপথ। দুর্লভ এ বৃক্ষ স্বপ্নপুরীর জীবন্ত চিড়িয়াখানায় সংযোজন করেছে নতুন সৌন্দর্য মাত্রা। সব মিলিয়ে বলা যায় কোন পর্যটক যদি একবার স্বপ্নপুরীতে যান তাহলে সত্যি স্বপ্নের মাঝে হারিয়ে যাবেন। 

স্বপ্নপুরী হচ্ছে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ বিনোদনকেন্দ্র। এখানে রয়েছেদেশী-বিদেশী বিভিন্ন পশু-পাখির অবিকল ভাষ্কর্য, কৃত্রিম পাহাড়, কৃত্রিম ঝর্ণা এবং ইট-সিমেন্টে নির্মিত বাংলাদেশের এক সুবিশাল মানচিত্রের সমন্বয়ে তৈরী একটি কৃত্রিমচিড়িয়াখানা, জীবন্ত পশুপাখীদের চিড়িয়াখানা,শিশুদের জন্য পার্ক, দোলনা, বায়োস্কোপ ইত্যাদি।

সারিসারি সবুজ দেবদারু গাছের মনোলোভা সৌন্দর্য আর বিস্তীর্ণ ঝিলের তীরে ফুটন্তগোলাপ বাগানের মাঝখানে স্থাপিত অপরূপ সুন্দর “নিশিপদ্ম”। পর্যটকদের বিনোদনের জন্য আরো রয়েছে বিশাল দিঘিতে স্পিডবোট ও ময়ূরপঙ্খীনাও, দুইঘোড়া চালিত টমটম, হরেক রকম সুগন্ধ ও সৌন্দর্য এবং স্বচ্ছ পানির ফোয়ারা বিশিষ্ট কয়েকটি ফুল বাগান এবং বিশ্রামের জন্য আকর্ষণীয় রেষ্টহাউস ও ডাকবাংলোসহ বিনোদনের আরো অনেক উপকরণ।

যেভাবে যাবেন :
ঢাকা থেকে গাবতলী কিংবা সায়েদাবাদ বাসটার্মিনাল থেকে ৪০০ থেকে ৬৫০ টাকার মধ্যে দিনাজপুরের গাড়ীতে করে দিনাজপুরে সেখান থেকে বাস যোগে স্বপ্নপুরী যাওয়া যায়।

স্বপ্নপুরীর পাশেই থাকার জন্য আবাসিক হোটেল রয়েছে। এছাড়া দিনাজপুর জেলা ডাকবাংলো ও অন্যান্য সরকারী ভবনে রাত্রিযাপন করা যাবে। এক্ষেত্রে জেলা ডাকবাংলোর বা অন্যান্য আবাসিক হোটেলের কর্মকর্তাদের আগেই সব কিছু জানিয়ে রাখতে হবে।

প্রবেশমূল্য :
বাস ও মিনিবাসের মূল্য - ৪০০ টাকা
মাইক্রোবাসের মূল্য - ৩০০ টাকা
জনপ্রতি প্রবেশ মূল্য - ২০ টাকা


স্বপ্নপুরীর বাংলো ভাড়া: নীলপরী ৩০০ টাকা (প্রতি ডবল রুম), রজনীগন্ধা ৪০০ (প্রতি ডবল রুম), নিশি পদ্ম ১৫০০ টাকা (তিন রুমসহ বাংলো), চাঁদনী ৫০০ টাকা (প্রতি ডবল রুম), সন্ধ্যা তারা ১০০/১৩০০ টাকা (প্রতি ডবল নন এসি ও এসি রুম)

ঢাকা থেকে বুকিং ব্যবস্থা ঢাকা থেকেও স্বপ্নপুরীর মোটেল বা বাংলো বুকিংয়ের সুবিধা আছে। ঠিকানা : হোটেলের সফিনা, ১৫২ হাজী ওসমান গনি রোড, আলুবাজার ঢাকা। ফোন : ৯৫৫৪৬৩০-৯৫৬২১৩০।
স্বপ্নপুরীতে রয়েছে অল্প দামে খাবারের ব্যবস্থা : ভাত, সবজি, ডি, ডাল ১৫ টাকা, ভাত, সবজি, মাছ, ডাল ২০ টাকা ও ভাত, সবজি মুরগি, ডাল ৩০ টাকা।

এছাড়াও স্বপ্নপুরীর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা পর্যটন সুবিধা দিতে একটি আধুনিক হোটেল, চাইনিজ রেস্টুরেন্ট, মুক্তিযুদ্ধের স্মরণে স্বতন্ত্র স্পট, পাখির রাজ্য, বেলকার, রোপকার, মানবিক চৈতন্যে ভাস্কর্য শিল্প ইত্যাদি নির্মাণের পরিকল্পনা মোতাবেক, যার নির্মাণ কাজ ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। স্বপ্নপুরী ভ্রমণে সব ভ্রমণ পিপাসুকে আমন্ত্রণ। 


নিঝুম দ্বীপের যেসব সৌন্দর্য্য দেখে আপনি মুগ্ধ না হয়ে পারবেন না!


অপার সম্ভাবনাময় প্রাকৃতিক সম্পদ আর নজরকাড়া সৌন্দর্যে ভরপুর রূপসী বাংলাদেশে রয়েছে হাজারও ভ্রমন স্পট। ভিন্নধর্মী সব বৈশিষ্ট্যের কারনে ভ্রমন পিপাসুদের কাছে সব ভ্রমন স্পটের আলাদা গুরুত্ব রয়েছে। ভ্রমন পিপাসুদের কাছে তেমনি গুরুত্বপূর্ণ একটি  ভ্রমন স্পট হচ্ছে নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলার ছোট্ট দ্বীপ, নিঝুম দ্বীপ। একে 'দ্বীপ' বলা হলেও এটি মূলত একটি 'চর'। নিঝুম দ্বীপের পূর্ব নাম ছিলো চর-ওসমান। নানা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য এ ভরপুর ও চিত্রা হরিণের আবাস্থল হিসেবে নিঝুম দ্বীপ বেশ জনপ্রিয়।

নিঝুম দ্বীপের যে সৌন্দর্য্য গুলো আপনার মন কেড়ে নিতে সক্ষম হবেঃ
নিঝুম দ্বীপে আছে একটি জাতীয় উদ্যান যেখানে রয়েছে অসংখ্য চিত্রা হরিণ। নিঝুম দ্বীপের মতো  অন্য কোন বনে কাছাকাছি থেকে এত বেশি চিত্রা হরিণ দেখা যায় না। শীতে নানান রকম অতিথি পাখি এই দ্বীপে বেড়াতে আসে। অতিথি পাখির বিচরণ ও চিত্রা হরিণের ছোটাছুটি সহজেই আপনার মন কেড়ে নিতে সক্ষম। শীতকালে নিঝুম দ্বীপের সৌন্দর্য্য বহুগুণে বৃদ্ধি পায়। তাই ইচ্ছে থাকলে সঙ্গী নিয়ে, ঘুরে আসতে পারেন চিত্রা হরিণের দেশ থেকে। অবশ্য নিঝুম দ্বীপে পর্যটকদের থাকার ভালো ব্যবস্থাও আছে।

নিঝুম বনে আরও আছে উদ্বিড়াল, মেছো বাঘ, খেকশিয়াল ইত্যাদি। দ্বীপে পাখিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল— নিশি বক, কানিবক, গোবক, পানকৌড়ি, ধূসর বক, কাদাখোঁচা, বালিহাঁস, লালপা, নানান জাতের মাছরাঙ্গা ইত্যাদি। পৃথিবী বিপন্ন ইন্ডিয়ান ইস্কিমার বা দেশী গাঙচষার অন্যতম বিচরণস্থল এই দ্বীপ।

নিঝুম দ্বীপে বেড়ানোর মূল আকর্ষণ এখানকার বন। ভালোভাবে জঙ্গল দেখতে হলে ‘নামা’ বাজারের পাশের খাল ধরে নৌকায় চড়ে যেতে হবে চৌধুরীর খালে। এই খাল একেবারে জঙ্গলের ভেতরে চলে গেছে। বেশি হরিণ দেখতে হলে নৌকায় কিংবা বনের পাশে কোথাও নিজেদের আড়াল করে নীরবে অপেক্ষা করতে হবে। এছাড়া নিঝুম দ্বীপে আছে সমুদ্র সৈকত। জনমানবহীন এই সৈকতেও বেড়াতে পারেন। আর এখানকার অধিবাসীদের জীবনযাত্রা দেখতে ভুলবেন না।

কিভাবে নিঝুম দ্বীপে যাবেন জেনে নিনঃ
ঢাকা থেকে দুই উপায় নিঝুম দ্বীপ  যাওয়া যায়। তুলনামূলক আরামদায়ক ও সহজ পথ হল ঢাকার সদরঘাট থেকে লঞ্চে হাতিয়ার তমরুদ্দী।

সদরঘাট থেকে একটি করে লঞ্চ প্রতিদিন তমরুদ্দীর উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। ঢাকা থেকে বিকেল পাঁচটায় ছেড়ে তমুরুদ্দী পৌঁছাতে পরদিন সকাল হয়ে যায়। সেখান থেকে বন্দরটিলা ঘাট এ যেতে অটো রিকশা এ সময় লাগে । রিজার্ভ নিলে ভাড়া ৪শ’ থেকে ৫শ’ টাকা। যাওয়া যাবে তিন থেকে চারজন। সেখানে ট্রলারে চ্যানেল পার হলেই বন্দরটিলা। এরপর আবার নিঝুম দ্বীপের নামা বাজার যেতে হবে রিকশা কিংবা অটো রিকশায়। ভাড়া ৮০ থেকে দেড়শ টাকা। তারমানে সন্ধ্যায় ঢাকা থেকে যাত্রা করে পরদিন দুপুরে পৌঁছানো যাবে নিঝুম দ্বীপে।

নিঝুম দ্বীপে যাওয়ার অন্য রাস্তা হল সড়ক পথ...
প্রথমে যেতে হবে নোয়াখালীর সোনাপুর। সেখান থেকে অটো রিকশা নিয়ে যেতে হবে চর জব্বার ঘাটে। এরপরে সি ট্রাক কিংবা ইঞ্জিন নৌকায় চড়ে যেতে হবে হাতিয়ার নলচিরা ঘাট। সেখান থেকে আবার বাস কিংবা অটো রিকশায় জাহাজমারা বাজার। জাহাজমারা বাজার থেকে আবার ইঞ্জিন নৌকায় যেতে হবে নিঝুম দ্বীপ। তবে ভ্রমণে গেলে ঢাকার সদরঘাট থেকে লঞ্চে যাওয়াই ভালো।

যা না খেয়ে ফিরবেন নাঃ
রসভরি পিঠা - রসে টইটুম্বুর থাকে বলেই এই পিঠার নাম রসভরি। এই পিঠা নোয়াখালীর একেবারেই নিজস্ব, ভাল হাতে তৈরী হলে এই পিঠা স্বাদে অতুলনীয় হয়ে ঊঠবে।

থাকবেন কোথায় আর খরচ কেমন হতে পারেঃ
নিঝুম দ্বীপে থাকার জন্য একমাত্র ভালো মানের জায়গা হল অবকাশ পর্যটনের নিঝুম রিসোর্ট। এখানে দুই শয্যার কক্ষ ভাড়া ১ হাজার ৫শ’ টাকা। তিন শয্যার কক্ষ ১ হাজার ৮শ’ টাকা। চার শয্যার কক্ষ ২ হাজার টাকা। ৫ শয্যার ডরমিটরির ভাড়া ১৮ হাজার টাকা। ১২ শয্যার ডরমিটরি ৩ হাজার টাকা।

বুকিং সুবিধা
ঢাকা থেকে এ রিসোর্টের বুকিং দেওয়া যায়। যোগাযোগ: অবকাশ পর্যটন লিমিটেড, শামসুদ্দিন ম্যানশন, ১০ম তলা, ১৭ নিউ ইস্কাটন, ঢাকা। ফোন: ০২-৮৩৫৮৪৮৫, ৯৩৪২৩৫১, ০১৫৫২৪২০৬০২।

নিঝুম দ্বীপে প্রচুর হরিণ দেখতে হলে ভ্রমণকালীন কিছু বিষয় মাথায়রাখা উচিত। যেমনঃ-
১.বনের ভেতরে চলতে হবে নিঃশব্দে। সামান্য হৈচৈ করলে এখানে হরিণের দেখা পাওয়া কঠিন হয়ে পড়বে।
২.জঙ্গলে ট্রেকিংয়ের সময় যথা সম্ভব সবাই হালকা রংয়ের সুতি পোশাক পরবেন। বন্য প্রাণীদের দৃষ্টি খুব প্রখর। বেশে উজ্জ্বল রং এর পোশাকের কারণে দূর থেকে দেখে ফেলতে পারে।

বন্ধুরা, জানা হলো অনেক কিছু এবার তাহলে বেড়িয়ে আসার পালা। ঘুরে আসুন নিঝুম দ্বীপ থেকে আর চিত্রা হরিণের অরণ্য, নিঝুম দ্বীপ  ঘুরে কেমন লাগল তা আমাদের মাঝে শেয়ার করতে একদম ভুল করবেন না।

এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি, সকল দেশের রানী সে যে আমার জন্মভূমি!


ধনধান্য পুষ্প ভরা এই যে দেশ আমাদের, এই দেশের প্রতি পরতে পরতে মিশে আছে সৌন্দর্য। যেন কোন কবির কবিতার খাতা কিংবা কোন চিত্রশিল্পীর খুব সুনিপুনভাবে আঁকা কোন চিত্রকর্ম। এই জন্য কবি বলেছেন, আপনাদের সবার জন্য এই উদাত্ত আহ্বান, আসুন, ছবির মত এই দেশে একবার বেরিয়ে যান।

যদি হাতে সময় থাকে বেশ ভাল, তাহলে বাংলাদেশ ভ্রমনে বের হওয়াটা খুবই ভাল একটা সিদ্ধান্ত। আপনি শুরু করতে পারেন সিলেট থেকে। সুফি আউলিয়াদের পূন্যভূমি হিসাবে পরিচিত সিলেট। এখানে দেখার মত আছে অনেক কিছু। জাফলং, শ্রীমঙ্গল এসব জায়গায় গেলে সারাদিনই থেকে যেতে ইচ্ছে হবে। এছাড়া সিলেট শহরে রয়েছে বেশ অনেকগুলো মাজার।

সিলেট থেকে চলে যাওয়া যায় চট্টগ্রামের দিকে। প্রথমে বান্দরবানের দিকে চলে যেতে পারেন। তবে বান্দরবান মনের সুখে ঘোরার জন্য একদিন দুই দিন মোটেও যথেষ্ট সময় নয়। এখানে পাহাড়, বনভূমি সব মিলিয়ে এক অদ্ভুত পরিবেশের সৃষ্টি করে। পাহাড়ের সাথে পাহাড়ের মিতালী, মেঘে মেঘে উড়ে যাওয়া, এক অসম্ভব সুন্দর পরিবেশ এখানটায়।

রাঙ্গামাটি গেলে ঝুলন্ত ব্রিজ দেখে আসা কোনভাবেই ভুলে যাওয়া চলবে না। দেশ বিদেশের পর্যটকেরা এসে দেখে যান এই রাঙ্গামাটির ঝুলন্ত সেতু। রাঙ্গামাটিও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দিক থেকে অতুলনীয়।

কক্সবাজারে আছে বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত। কক্সবাজারে সাগরতীরের সৌন্দর্য মনকে অনেকখানি প্রভাবিত করে। তবে এরকম আরেকটি জায়গা হলো কটকা। সুন্দরবন এর একপাশে এই কটকা। কটকা সমুদ্র সৈকতের একপাশে সমুদ্র আরেকপাশে সুন্দরবন। এ সৌন্দর্যের আরেক নিদর্শন।

সেন্ট মার্টিন বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রাকৃতিকভাবে সুন্দর ও মনোরম একটি জায়গা। রাত্রে বেলা সমুদ্রতীরে শুয়ে শুয়ে খোলা আকাশের নিচে আকাশের অগনিত তারা দেখার মাঝে যে কী আনন্দ তা বুঝতে কবি হতে হয় না, সেন্ট মার্টিনে সেই অনুভূতিটুকুই জেগে ওঠে।

এছাড়াও বাংলাদেশে আরো অনেক সুন্দর সুন্দর জায়গা আছে ভ্রমন করার মত। যেমন সুন্দরবনের হিরন পয়েন্ট, দুবলার চর, আলোর কোন ইত্যাদি। সবমিলিয়ে বাংলাদেশ আসলে প্রকৃতি দ্বারা অনেক ঐশ্বর্যমণ্ডিত। এ দেশে ভ্রমনপিপাসু মানুষদের জন্য বেশ ভাল একটা স্থান হতে পারে যদি এখানকার পর্যটন ব্যবস্থা আরো খানিকটা উন্নত হয়। (সংকলিত) 

পুঠিয়ার ৫টি স্থাপনা যা বাংলাদেশের অন্য কোথাও নেই!


প্রাচীন প্রত্নতত্ত্ব ও নয়নাভিরাম সৌন্দর্য্য মন্ডিত কারুকার্যে ভরপুর ঐতিহাসিক স্থাপনাশৈলীর নিদর্শন সমৃদ্ধ পর্যটন স্থান রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলা। প্রাচীন সব স্থাপনার কারনেই পুঠিয়ার সুনাম দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত হয়েছে। পুঠিয়াতে রয়েছে ঐতিহাসিক ৫টি স্থাপনা যা বাংলাদেশের অন্য কোথাও নেই! প্রাচীন করিগরদের নিপুন হাতে তৈরী প্রাচীন সব স্থাপত্যশৈলী দেখার জন্য দেশী বিদেশী শতশত পর্যটক পুঠিয়া উপজেলায় ভিড় করে। এতক্ষণে নিশ্চয় জানতে ইচ্ছে করছে কি কি রয়েছে পুঠিয়া উপজেলায়? আর কেনই বা শতশত পর্যটক পুঠিয়াতে ভিড় জমায়? বলবো সবি, তবে আপনি যদি সত্যিকারের ট্রাভেলার হয়ে থাকেন তাহলে রাজশাহীর পুঠিয়ার যে পাঁচটি জিনিস না দেখলে আপনার ভ্রমন বৃথা হতে পারে। তেমনই ৫টি স্থাপনা সাথে আজকে আপনাদের পরিচিত করিয়ে দেব।

পুঠিয়ার যে ৫টি স্থাপনা না দেখলেই নাঃ
পুঠিয়া নামক ছোট্ট উপজেলাটিতে দেখার মত অনেক কিছুই রয়েছে। ভ্রমন পিপাসুদের কাছে যা অনেক আনন্দেরও। চলুন জেনে নেই পুঠিয়ার সেই ৫টি জিনিস সম্পর্কে যা বাংলাদেশের অন্য কোথাও নেই!

 
১. শিব মন্দির
শিব মন্দির পুঠিয়ার অন্যতম ঐতিহ্য। এতো বড় প্রাচীন শিব মন্দির বাংলাদেশের আর অন্য কোথাও নেই। পরিসংখ্যান মতে এটিই এশিয়ার সবচেয়ে বড় শিব মন্দির।

ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কের পুঠিয়া বাসস্টান্ড থেকে দেড় দুই কিলোমিটার সামনে রাস্তা ধরে দক্ষিণ দিকে  রিক্সা অথবা ভ্যান ধরে কিছুটা পথ সামনে গেলেই বিশাল একটা চুঁড়া জানান দিবে মন্দিরের অবস্থান। রাজবাড়ীর প্রবেশ পথে পুকুরের পাড়ে নিশ্চুপ দাড়িয়ে থাকা মন্দিরটির নাম শিব মন্দির। মহারাণী ভুবন মোহনী দেবী ১৮২৩ সালে এই মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেন।  সিঁড়ি বেয়ে মন্দিরের দোতলায় উঠলেই দেখা যাবে এর চার পাশের বারান্দা এবং একটি মাত্র কক্ষ যা দুই স্তর বিশিষ্ঠ বারান্দাকে ঘিরে রেখেছে। মন্দিরের মূল কক্ষের অভ্যন্তরে রয়েছে কষ্ঠি পাথরের বিশাল এক শিব লিঙ্গ। সমগ্র মন্দিরের দেয়ালে পৌরাণিক কাহিনী চিত্র খচিত আছে। শিব মন্দিরের কোল ঘেঁষে লাগানো পূর্ব পাশে গোল গুম্বুজ আকৃতির আরেকটি ছোট মন্দির আছে।

 
২. দোল মন্দির বা হাজার দুয়ারী ঘর
দোল মন্দির বা হাজার দুয়ারী ঘর এটিও বাংলাদেশের আর অন্য কোথাও নেই। শিব মন্দির পেরিয়ে দক্ষিণ দিকে গেলেই চোখে পড়বে চার তলা বিশিষ্ঠ  মন্দিরটি যার নাম দোল মন্দির। চার পাশে প্রায় ১০০০ টি দরজা সম্বলিত এই মন্দিরটি স্থানীয় লোকজনের কাছে হাজার দুয়ারী ঘর নামে পরিচিত। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে রাণী হেমন্ত কুমারী দেবী এ মন্দিরটি নির্মাণ করেন।

 
৩. পুঠিয়া রাজবাড়ী
দোল মন্দিরের সামনে ঘাসে ঢাকা বিশাল মাঠের দক্ষিণ প্রান্তে দাড়িয়ে আছে পুঠিয়ার ঐতিহাসিক রাজবাড়ী। রাণী হেমন্ত কুমারী দেবী তাঁর শাশুড়ি মহারাণী শরৎসুন্দরী দেবীর সম্মানার্থে ১৮৯৫ সালে নির্মাণ করেন বিশাল আকৃতির বিখ্যাত এই রাজবাড়ী। পুঠিয়ার এই রাজবাড়ীটি বর্তমানে লস্করপুর মহাবিদ্যা নিকেতনের একাডেমিক ভবন হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। রাজবাড়ীর পূর্ব পাশে রাজরাণীর গোসল করার জন্য পুকুরের কোল ঘেঁসে তৈরী করা হয়েছিল সান বাঁধানো রাণী ঘাট যার অস্তিত্ব এখনো বিদ্যমান।

 
৪. গোবিন্দ মন্দির
পুঠিয়া রাজবাড়ীর ভেতরে পোড়ামাটির অলঙ্করণে সমৃদ্ধ একটি মন্দির আছে যার নাম গোবিন্দ মন্দির। বাংলাদেশের অন্য কোন জায়গায় রাজবাড়ীর মধ্যে এতো সুন্দর মন্দির আর নেই। বর্গাকারে নির্মিত এই মন্দিরটির চার পাশে চারটি বর্গাকার কক্ষ আছে। মন্দিরটি আড়াইশ বছরের পুরোনো বলে প্রচলিত থাকলেও এর চাকচিক্য দেখে ধারণা করা হয় এটি উনবিংশ শতাব্দীতেই তৈরী করা হয়েছিল।

 
৫. আহ্নিক মন্দির ও গোপাল মন্দির
গোবিন্দ মন্দিরের দক্ষিণ পাশে ছোট আরো একটি মন্দির রয়েছে। রাজবাড়ীর পশ্চিম পাশে দিঘি এবং তার পশ্চিম তীরেই রয়েছে কারুকার্য খঁচিত আকর্ষণীয় বড় আহ্নিক মন্দির। আহ্নিক মন্দিরের পাশে দক্ষিণমুখী অবস্থায় আরো একটি মন্দির দাঁড়িয়ে আছে যার নাম গোপাল মন্দির। জানা মতে, বাহারি কারুকার্য খঁচিত এতো দারুন আহ্নিক মন্দির কপি পেস্ট বাংলাদেশে আর একটিও নেই।

সুপারী ও নারকেল গাছঘেরা ঐতিহাসিক স্থাপত্য শৈলীর প্রাচীন এই নিদর্শন গুলো দেখার জন্য প্রতিদিন দেশ বিদেশের শত শত পর্যটক ভিড় জমান রাজশাহীর পুঠিয়ায়। আমি বেশ কয়েক বার পুঠিয়া রাজবাড়ীতে বেড়াতে গিয়েছি আমার খুব ভাল লেগেছে। তাই আপনাদেরকেও আমন্ত্রিত, আশাকরি আপনাদের ও খুব ভাল লাগবে।