প্রাচীন
প্রত্নতত্ত্ব ও নয়নাভিরাম সৌন্দর্য্য মন্ডিত কারুকার্যে ভরপুর ঐতিহাসিক
স্থাপনাশৈলীর নিদর্শন সমৃদ্ধ পর্যটন স্থান রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলা। প্রাচীন
সব স্থাপনার কারনেই পুঠিয়ার সুনাম দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত
হয়েছে। পুঠিয়াতে রয়েছে ঐতিহাসিক ৫টি স্থাপনা যা বাংলাদেশের অন্য কোথাও
নেই! প্রাচীন করিগরদের নিপুন হাতে তৈরী প্রাচীন সব
স্থাপত্যশৈলী দেখার জন্য দেশী বিদেশী শতশত পর্যটক পুঠিয়া উপজেলায় ভিড় করে।
এতক্ষণে নিশ্চয় জানতে ইচ্ছে করছে কি কি রয়েছে পুঠিয়া উপজেলায়? আর কেনই বা
শতশত পর্যটক পুঠিয়াতে ভিড় জমায়? বলবো সবি, তবে আপনি যদি সত্যিকারের
ট্রাভেলার হয়ে থাকেন তাহলে রাজশাহীর পুঠিয়ার যে পাঁচটি জিনিস না দেখলে
আপনার ভ্রমন বৃথা হতে পারে। তেমনই ৫টি স্থাপনা সাথে আজকে আপনাদের পরিচিত করিয়ে দেব।
পুঠিয়ার যে ৫টি স্থাপনা না দেখলেই নাঃ
পুঠিয়া নামক ছোট্ট উপজেলাটিতে দেখার মত অনেক কিছুই রয়েছে। ভ্রমন পিপাসুদের কাছে যা অনেক আনন্দেরও। চলুন জেনে নেই পুঠিয়ার সেই ৫টি জিনিস সম্পর্কে যা বাংলাদেশের অন্য কোথাও নেই!
১. শিব মন্দির
শিব মন্দির পুঠিয়ার অন্যতম ঐতিহ্য। এতো বড় প্রাচীন শিব মন্দির বাংলাদেশের আর অন্য কোথাও নেই। পরিসংখ্যান মতে এটিই এশিয়ার সবচেয়ে বড় শিব মন্দির।
ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কের পুঠিয়া বাসস্টান্ড থেকে দেড় দুই কিলোমিটার সামনে রাস্তা ধরে দক্ষিণ দিকে রিক্সা অথবা ভ্যান ধরে কিছুটা পথ সামনে গেলেই বিশাল একটা চুঁড়া জানান দিবে মন্দিরের অবস্থান। রাজবাড়ীর প্রবেশ পথে পুকুরের পাড়ে নিশ্চুপ দাড়িয়ে থাকা মন্দিরটির নাম শিব মন্দির। মহারাণী ভুবন মোহনী দেবী ১৮২৩ সালে এই মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেন। সিঁড়ি বেয়ে মন্দিরের দোতলায় উঠলেই দেখা যাবে এর চার পাশের বারান্দা এবং একটি মাত্র কক্ষ যা দুই স্তর বিশিষ্ঠ বারান্দাকে ঘিরে রেখেছে। মন্দিরের মূল কক্ষের অভ্যন্তরে রয়েছে কষ্ঠি পাথরের বিশাল এক শিব লিঙ্গ। সমগ্র মন্দিরের দেয়ালে পৌরাণিক কাহিনী চিত্র খচিত আছে। শিব মন্দিরের কোল ঘেঁষে লাগানো পূর্ব পাশে গোল গুম্বুজ আকৃতির আরেকটি ছোট মন্দির আছে।
২. দোল মন্দির বা হাজার দুয়ারী ঘর
দোল মন্দির বা হাজার দুয়ারী ঘর এটিও বাংলাদেশের আর অন্য কোথাও নেই। শিব মন্দির পেরিয়ে দক্ষিণ দিকে গেলেই চোখে পড়বে চার তলা বিশিষ্ঠ মন্দিরটি যার নাম দোল মন্দির। চার পাশে প্রায় ১০০০ টি দরজা সম্বলিত এই মন্দিরটি স্থানীয় লোকজনের কাছে হাজার দুয়ারী ঘর নামে পরিচিত। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে রাণী হেমন্ত কুমারী দেবী এ মন্দিরটি নির্মাণ করেন।
৩. পুঠিয়া রাজবাড়ী
দোল মন্দিরের সামনে ঘাসে ঢাকা বিশাল মাঠের দক্ষিণ প্রান্তে দাড়িয়ে আছে পুঠিয়ার ঐতিহাসিক রাজবাড়ী। রাণী হেমন্ত কুমারী দেবী তাঁর শাশুড়ি মহারাণী শরৎসুন্দরী দেবীর সম্মানার্থে ১৮৯৫ সালে নির্মাণ করেন বিশাল আকৃতির বিখ্যাত এই রাজবাড়ী। পুঠিয়ার এই রাজবাড়ীটি বর্তমানে লস্করপুর মহাবিদ্যা নিকেতনের একাডেমিক ভবন হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। রাজবাড়ীর পূর্ব পাশে রাজরাণীর গোসল করার জন্য পুকুরের কোল ঘেঁসে তৈরী করা হয়েছিল সান বাঁধানো রাণী ঘাট যার অস্তিত্ব এখনো বিদ্যমান।
৪. গোবিন্দ মন্দির
পুঠিয়া রাজবাড়ীর ভেতরে পোড়ামাটির অলঙ্করণে সমৃদ্ধ একটি মন্দির আছে যার নাম গোবিন্দ মন্দির। বাংলাদেশের অন্য কোন জায়গায় রাজবাড়ীর মধ্যে এতো সুন্দর মন্দির আর নেই। বর্গাকারে নির্মিত এই মন্দিরটির চার পাশে চারটি বর্গাকার কক্ষ আছে। মন্দিরটি আড়াইশ বছরের পুরোনো বলে প্রচলিত থাকলেও এর চাকচিক্য দেখে ধারণা করা হয় এটি উনবিংশ শতাব্দীতেই তৈরী করা হয়েছিল।
৫. আহ্নিক মন্দির ও গোপাল মন্দির
গোবিন্দ মন্দিরের দক্ষিণ পাশে ছোট আরো একটি মন্দির রয়েছে। রাজবাড়ীর পশ্চিম পাশে দিঘি এবং তার পশ্চিম তীরেই রয়েছে কারুকার্য খঁচিত আকর্ষণীয় বড় আহ্নিক মন্দির। আহ্নিক মন্দিরের পাশে দক্ষিণমুখী অবস্থায় আরো একটি মন্দির দাঁড়িয়ে আছে যার নাম গোপাল মন্দির। জানা মতে, বাহারি কারুকার্য খঁচিত এতো দারুন আহ্নিক মন্দির কপি পেস্ট বাংলাদেশে আর একটিও নেই।
সুপারী ও নারকেল গাছঘেরা ঐতিহাসিক স্থাপত্য শৈলীর প্রাচীন এই নিদর্শন গুলো দেখার জন্য প্রতিদিন দেশ বিদেশের শত শত পর্যটক ভিড় জমান রাজশাহীর পুঠিয়ায়। আমি বেশ কয়েক বার পুঠিয়া রাজবাড়ীতে বেড়াতে গিয়েছি আমার খুব ভাল লেগেছে। তাই আপনাদেরকেও আমন্ত্রিত, আশাকরি আপনাদের ও খুব ভাল লাগবে।
0 comments:
Post a Comment