Saturday, April 11, 2015

মহাস্থানগড় ভ্রমনে গিয়ে যে ৭টি দর্শণীয় স্থান কখনোই মিস করবেন না


মহাস্থানগড় প্রাচীন বাংলার অন্যতম একটি প্রত্নতাত্ত্বিক ও ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ স্থান। মহাস্থানগর হচ্ছে বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রাচীন নগরী। এক সময় এই নগরীটি প্রাচীন বাংলা রাজধানী ছিল। পূর্বে এর নাম ছিল পুন্ড্রবর্ধন ও পুণ্ড্রনগর। প্রাচীন ইতিহাস, ঐতিহ্য, দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রাচীন নগররাষ্ট্র এবং তার ধ্বংসাবশেষ ও প্রত্নস্থল হিসাবে সমগ্র বিশ্বের পর্যটক এবং প্রত্নতাত্ত্বিকদের কাছে মহাস্থানগড় আকর্ষণীয় ভ্রমন স্পট। প্রাচীন এই পর্যটন কেন্দ্রটি দেখার জন্য প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটক বগুড়ার মহাস্থানগড়ে ভিড় জমান। তবে মহাস্থানগড় নামক প্রাচীন এই নগরীকে ঘিরে অনেক গুলো দর্শণীয় স্থান  রয়েছে যার মধ্যে বিশেষ কিছু স্থান রয়েছে যা না দেখলে মহাস্থানগড় ভ্রমন অপূর্ণ থেকে যাবে। মহাস্থানগড় ভ্রমনে গিয়ে যে ৭টি দর্শণীয় স্থান কখনোই মিস করা ঠিক হবেনা  তা নিয়েই আজকের এই আলোচনা ....

মহাস্থানগড়ের দর্শণীয় ৭টি স্থানঃ

১. মাহী সওয়ার মাজার শরীফ:

মহাস্থানগড় বাস স্ট্যান্ড থেকে কিছুটা পশ্চিমে একটি ঐতিহাসিক মাজার শরীফ রয়েছে। পীরজাদা হযরত শাহ সুলতান মাহমুদ বলখী (র:) কে কেন্দ্র করে প্রাচীন এই মাজার শরীফটি গড়ে ওঠেছিল। কথিত আছে মাছের পিঠে আরোহন করে তিনি বরেন্দ্র ভূমিতে আসেন। তাই তাকে মাহী সওয়ার বলা হয়। প্রচলিত এক গল্প থেকে জানা যায়, হযরত মীর বোরহান নামক একজন মুসলমান এখানে বাস করতেন। পুত্র মানত করে গরু কোরবানী দেয়ার অপরাধে রাজা পরশুরাম তার বলির আদেশ দেন এবং তাকে সাহায্য করতেই মাছের পিঠে আরোহন করে মাহী সওয়ারেরর আগমন ঘটে।

২. কালীদহ সাগর:
গড়ের পশ্চিম অংশে রয়েছে ঐতিহাসিক কালীদহ সাগর এবং পদ্মাদেবীর বাসভবন। কালীদহ সাগর সংলগ্ন ঐতিহাসিক গড় জড়িপা নামক একটি মাটির দূর্গ রয়েছে। প্রাচীন এই কালীদহ সাগরে প্রতিবছরের মার্চ মাসে হিন্দু ধর্মালম্বীদের রারুন্নী স্নান অনুষ্ঠিত হয়। স্নান শেষে পুণ্যার্থীগণ সাগরপাড়ে গঙ্গাপূজা ও সংকীর্তন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন।

৩. শীলাদেবীর ঘাট:
গড়ের পূর্বপাশে রয়েছে করতোয়া নদী এর তীরে ‘শীলাদেবীর ঘাট’। শীলাদেবী ছিলেন পরশুরামের বোন। এখানে প্রতি বছর হিন্দুদের স্নান হয় এবং একদিনের একটি মেলা বসে।


৪. জিউৎকুন্ড কুপ:
মহাস্থান গড়ের শীলাদেবীর ঘাটের  পশ্চিমে জিউৎকুন্ড নামে একটি বড় কুপ আছে। কথিত আছে এই কুপের পানি পান করে পরশুরামের আহত সৈন্যরা সুস্থ হয়ে যেত। যদিও এর কোন ঐতিহাসিক ভিত্তি পাওয়া যায়নি।

৫. জাদুঘর:

মহাস্থান গড় খননের ফলে মৌর্য, গুপ্ত, পাল ও সেন যুগের বিভিন্ন দ্রব্যাদিসহ অনেক দেবদেবীর মূর্তি পাওয়া গেছে যা গড়ের উত্তরে অবস্থিত জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে। মহাস্থান গড় ছাড়াও আরও বিভিন্ন স্থানের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন এখানে সংরক্ষিত আছে।

৬. বেহুলার বাসর ঘর:

মহাস্থানগড় বাস স্ট্যান্ড থেকে প্রায় ২কি.মি দক্ষিণ পশ্চিমে একটি বৌদ্ধ স্তম্ভ রয়েছে যা সম্রাট অশোক নির্মাণ করেছিলেন বলে মনে করা হয়। স্তম্ভের উচ্চতা প্রায় ৪৫ ফুট। স্তম্ভের পূর্বার্ধে রয়েছে ২৪ কোন বিশিষ্ট চৌবাচ্চা সদৃশ একটি গোসল খানা । এটি বেহুলার বাসর ঘর নামেই বেশি পরিচিত।

৭. গোবিন্দ ভিটা:
মহাস্থানগড় জাদুঘরের ঠিক সামনেই গোবিন্দ ভিটা অবস্থিত। গোবিন্দ ভিটা একটি খননকৃত প্রত্নস্থল। গোবিন্দ ভিটা শব্দের অর্থ গোবিন্দ (হিন্দু দেবতা) তথা বিষ্ণুর আবাস। কিন্তু বৈষ্ণব ধর্মের কোনো নিদর্শন এ স্থানে পাওয়া যায়নি। তবুও প্রত্নস্থলটি স্থানীয়ভাবে গোবিন্দ ভিটা নামে পরিচিত।

বন্ধুরা মহাস্থানগড়ের ৭টি গুরুত্বপূর্ণ স্থান সম্পর্কে  জানানোর চেষ্টা করলাম। আশা করি, ভ্রমনে গিয়ে এবার আর এই ৭টি দর্শণীয় স্থান দেখতে ভুল করবেন না। আপনার ভ্রমন নিরাপদ ও আনন্দময় হোক এই শুভ প্রত্যাশা রইল। 

0 comments:

Post a Comment