Saturday, April 11, 2015

নিঝুম দ্বীপের যেসব সৌন্দর্য্য দেখে আপনি মুগ্ধ না হয়ে পারবেন না!


অপার সম্ভাবনাময় প্রাকৃতিক সম্পদ আর নজরকাড়া সৌন্দর্যে ভরপুর রূপসী বাংলাদেশে রয়েছে হাজারও ভ্রমন স্পট। ভিন্নধর্মী সব বৈশিষ্ট্যের কারনে ভ্রমন পিপাসুদের কাছে সব ভ্রমন স্পটের আলাদা গুরুত্ব রয়েছে। ভ্রমন পিপাসুদের কাছে তেমনি গুরুত্বপূর্ণ একটি  ভ্রমন স্পট হচ্ছে নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলার ছোট্ট দ্বীপ, নিঝুম দ্বীপ। একে 'দ্বীপ' বলা হলেও এটি মূলত একটি 'চর'। নিঝুম দ্বীপের পূর্ব নাম ছিলো চর-ওসমান। নানা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য এ ভরপুর ও চিত্রা হরিণের আবাস্থল হিসেবে নিঝুম দ্বীপ বেশ জনপ্রিয়।

নিঝুম দ্বীপের যে সৌন্দর্য্য গুলো আপনার মন কেড়ে নিতে সক্ষম হবেঃ
নিঝুম দ্বীপে আছে একটি জাতীয় উদ্যান যেখানে রয়েছে অসংখ্য চিত্রা হরিণ। নিঝুম দ্বীপের মতো  অন্য কোন বনে কাছাকাছি থেকে এত বেশি চিত্রা হরিণ দেখা যায় না। শীতে নানান রকম অতিথি পাখি এই দ্বীপে বেড়াতে আসে। অতিথি পাখির বিচরণ ও চিত্রা হরিণের ছোটাছুটি সহজেই আপনার মন কেড়ে নিতে সক্ষম। শীতকালে নিঝুম দ্বীপের সৌন্দর্য্য বহুগুণে বৃদ্ধি পায়। তাই ইচ্ছে থাকলে সঙ্গী নিয়ে, ঘুরে আসতে পারেন চিত্রা হরিণের দেশ থেকে। অবশ্য নিঝুম দ্বীপে পর্যটকদের থাকার ভালো ব্যবস্থাও আছে।

নিঝুম বনে আরও আছে উদ্বিড়াল, মেছো বাঘ, খেকশিয়াল ইত্যাদি। দ্বীপে পাখিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল— নিশি বক, কানিবক, গোবক, পানকৌড়ি, ধূসর বক, কাদাখোঁচা, বালিহাঁস, লালপা, নানান জাতের মাছরাঙ্গা ইত্যাদি। পৃথিবী বিপন্ন ইন্ডিয়ান ইস্কিমার বা দেশী গাঙচষার অন্যতম বিচরণস্থল এই দ্বীপ।

নিঝুম দ্বীপে বেড়ানোর মূল আকর্ষণ এখানকার বন। ভালোভাবে জঙ্গল দেখতে হলে ‘নামা’ বাজারের পাশের খাল ধরে নৌকায় চড়ে যেতে হবে চৌধুরীর খালে। এই খাল একেবারে জঙ্গলের ভেতরে চলে গেছে। বেশি হরিণ দেখতে হলে নৌকায় কিংবা বনের পাশে কোথাও নিজেদের আড়াল করে নীরবে অপেক্ষা করতে হবে। এছাড়া নিঝুম দ্বীপে আছে সমুদ্র সৈকত। জনমানবহীন এই সৈকতেও বেড়াতে পারেন। আর এখানকার অধিবাসীদের জীবনযাত্রা দেখতে ভুলবেন না।

কিভাবে নিঝুম দ্বীপে যাবেন জেনে নিনঃ
ঢাকা থেকে দুই উপায় নিঝুম দ্বীপ  যাওয়া যায়। তুলনামূলক আরামদায়ক ও সহজ পথ হল ঢাকার সদরঘাট থেকে লঞ্চে হাতিয়ার তমরুদ্দী।

সদরঘাট থেকে একটি করে লঞ্চ প্রতিদিন তমরুদ্দীর উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। ঢাকা থেকে বিকেল পাঁচটায় ছেড়ে তমুরুদ্দী পৌঁছাতে পরদিন সকাল হয়ে যায়। সেখান থেকে বন্দরটিলা ঘাট এ যেতে অটো রিকশা এ সময় লাগে । রিজার্ভ নিলে ভাড়া ৪শ’ থেকে ৫শ’ টাকা। যাওয়া যাবে তিন থেকে চারজন। সেখানে ট্রলারে চ্যানেল পার হলেই বন্দরটিলা। এরপর আবার নিঝুম দ্বীপের নামা বাজার যেতে হবে রিকশা কিংবা অটো রিকশায়। ভাড়া ৮০ থেকে দেড়শ টাকা। তারমানে সন্ধ্যায় ঢাকা থেকে যাত্রা করে পরদিন দুপুরে পৌঁছানো যাবে নিঝুম দ্বীপে।

নিঝুম দ্বীপে যাওয়ার অন্য রাস্তা হল সড়ক পথ...
প্রথমে যেতে হবে নোয়াখালীর সোনাপুর। সেখান থেকে অটো রিকশা নিয়ে যেতে হবে চর জব্বার ঘাটে। এরপরে সি ট্রাক কিংবা ইঞ্জিন নৌকায় চড়ে যেতে হবে হাতিয়ার নলচিরা ঘাট। সেখান থেকে আবার বাস কিংবা অটো রিকশায় জাহাজমারা বাজার। জাহাজমারা বাজার থেকে আবার ইঞ্জিন নৌকায় যেতে হবে নিঝুম দ্বীপ। তবে ভ্রমণে গেলে ঢাকার সদরঘাট থেকে লঞ্চে যাওয়াই ভালো।

যা না খেয়ে ফিরবেন নাঃ
রসভরি পিঠা - রসে টইটুম্বুর থাকে বলেই এই পিঠার নাম রসভরি। এই পিঠা নোয়াখালীর একেবারেই নিজস্ব, ভাল হাতে তৈরী হলে এই পিঠা স্বাদে অতুলনীয় হয়ে ঊঠবে।

থাকবেন কোথায় আর খরচ কেমন হতে পারেঃ
নিঝুম দ্বীপে থাকার জন্য একমাত্র ভালো মানের জায়গা হল অবকাশ পর্যটনের নিঝুম রিসোর্ট। এখানে দুই শয্যার কক্ষ ভাড়া ১ হাজার ৫শ’ টাকা। তিন শয্যার কক্ষ ১ হাজার ৮শ’ টাকা। চার শয্যার কক্ষ ২ হাজার টাকা। ৫ শয্যার ডরমিটরির ভাড়া ১৮ হাজার টাকা। ১২ শয্যার ডরমিটরি ৩ হাজার টাকা।

বুকিং সুবিধা
ঢাকা থেকে এ রিসোর্টের বুকিং দেওয়া যায়। যোগাযোগ: অবকাশ পর্যটন লিমিটেড, শামসুদ্দিন ম্যানশন, ১০ম তলা, ১৭ নিউ ইস্কাটন, ঢাকা। ফোন: ০২-৮৩৫৮৪৮৫, ৯৩৪২৩৫১, ০১৫৫২৪২০৬০২।

নিঝুম দ্বীপে প্রচুর হরিণ দেখতে হলে ভ্রমণকালীন কিছু বিষয় মাথায়রাখা উচিত। যেমনঃ-
১.বনের ভেতরে চলতে হবে নিঃশব্দে। সামান্য হৈচৈ করলে এখানে হরিণের দেখা পাওয়া কঠিন হয়ে পড়বে।
২.জঙ্গলে ট্রেকিংয়ের সময় যথা সম্ভব সবাই হালকা রংয়ের সুতি পোশাক পরবেন। বন্য প্রাণীদের দৃষ্টি খুব প্রখর। বেশে উজ্জ্বল রং এর পোশাকের কারণে দূর থেকে দেখে ফেলতে পারে।

বন্ধুরা, জানা হলো অনেক কিছু এবার তাহলে বেড়িয়ে আসার পালা। ঘুরে আসুন নিঝুম দ্বীপ থেকে আর চিত্রা হরিণের অরণ্য, নিঝুম দ্বীপ  ঘুরে কেমন লাগল তা আমাদের মাঝে শেয়ার করতে একদম ভুল করবেন না।

0 comments:

Post a Comment