Saturday, April 11, 2015

জেনে নিন কেন বাঙালি-বিহারীর শহর সৈয়দপুর দেশের অন্য সব শহরের থেকে আলাদা


রংপুর বিভাগের সীমান্তবর্তী উত্তরের জেলা নীলফামারী। ছয়টি উপজেলার মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্যে প্রসিদ্ধ সৈয়দপুর। সৈয়দ বংশীয় ইসলামি চিন্তাবিদ ও ধর্মপ্রচারকের নামানুসারে নামকরণ করা হয়েছে সৈয়দপুর। ব্রিটিশ আমলে শহরটি গড়ে উঠেছে। দেশের সর্ববৃহৎ সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানা, দুটি গির্জা, চিনি মসজিদ, ইউরোপিয়ান ক্লাবসহ আরো অনেক কিছুই দেখার আছে সৈয়দপুরে। এক সময়কার সিটি শহর সৈয়দপুরে রয়েছে অনেক দর্শনীয় ও ব্রিটিশ আমলের তৈরি বেশ কিছু অবকাঠামো। এখানে রয়েছে দেশের বৃহত্তম রেলওয়ে কারখানা, বিমানবন্দর, সেনানিবাস, পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের এসপি অফিস, রেলওয়ের বিভাগীয় হাসপাতাল, ঐতিহ্যবাহী চিনি মসজিদ, দর্শনীয় গির্জা, মুর্তজা ইন্সটিটিউট, বিশ্বের অন্যতম ফাইলেরিয়া হাসপাতাল, হরেক রকম কুটির শিল্প, জুট মিল, বেনারসি পল্লী, ব্রিটিশ আমলে নির্মিত টেলিফোন ও টেলিগ্রাফ অফিস, সৈয়দপুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়, রেলওয়ে অফিসার্স ক্লাব, শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতির ধারক ও বাহক শতবছরের পুরাতন শিল্প-সাহিত্য সংসদ অন্যতম। পাশাপাশি দেখা যাবে বাস-ট্রাকের পরিত্যক্ত টায়ার জ্বালিয়ে জ্বালানি তেল তৈরি, এর একপাশে তৈরি হচ্ছে আন্তর্জাতিক মানের নোহা প্রেসার কুকার, ননস্টিক প্যান, ওভেন ও অন্যান্য তৈজসপত্র। যা দেশের চাহিদা মিটিয়ে পাশের ভারত, নেপাল ও ভুটানে রফতানি করা হচ্ছে। সৈয়দপুর প্লাজার দোতলায় তৈরি হচ্ছে পরচুলা ও শহরের বাঙালিপুরে হচ্ছে জুতার চামড়ায় নকশা। যাচ্ছে বিদেশের বিভিন্ন দেশে। 

শহর থেকে রেল কারখানায় যেতে লাগে পাঁচ মিনিট। কারখানার বিভাগীয় তত্ত্বাবধায়কের (ডিএস) অফিসে গিয়ে অনুমতি নিতে হয়। কারখানাটি ১৮৭০ সালে নির্মিত হয়েছে। মোট ২২টি শপ (উপকারখানা) রয়েছে। একসময় এখানকার ক্যারেজ শপে নতুন রেল বগি তৈরি হতো। শহরের সাহেবপাড়া এলাকায় খ্রিস্টান ধর্মাবম্বলীদের দুটি বড় সুন্দর গির্জা রয়েছে। 

সৈয়দপুরে আরো আছে চিনি মসজিদ। এর আরেক নাম চিলি মসজিদ। নির্মাণশৈলী ও সৌন্দর্যে অনন্য মসজিদ। প্রাণ জুড়িয়ে যাবার মত। নির্মাণকাল ১৮৬৩। অবস্থান ইসলামবাগ রসুলপুর এলাকায়। এর মিনার সংখ্যা ৩২। বড় গম্বুজ আছে তিনটি। চীনামাটির টুকরা দিয়ে ফুল ও গাছগাছড়ার নকশা মসজিদের গায়ে। শুক্রবারে দূর দূর থেকে এখানে মুসল্লি আসেন। মসজিদের বলতে গেলে গা ঘেঁষে খ্রিস্টান সিমেট্রি মানে কবরস্থান। গির্জাও আছে কাছে।

সৈয়দপুর শহরের পশ্চিম প্রান্ত দিয়ে বয়ে গেছে খরস্রোতা খড়খড়িয়া নদী। নদীর পূর্ব পাড়ে আছে শহর রক্ষা বাঁধ। বিকেলে অনেকে পরিবার-পরিজন নিয়ে ঘুরতে আসেন।

পাশেই সৈয়দপুর বাইপাস সড়ক। বিশাল এ সড়কের দুই ধারে বিস্তীর্ণ সবুজ। যেতে পারেন রেলওয়ে অফিসার্স ক্লাব দেখতে। লালরঙা ভবনটির সামনে সবুজ আঙিনা। বাতাসে শরীর জুড়াল। সৈয়দপুর বিমানবন্দর টাও কিন্তু বেশ সুন্দর। আরো দেখার আছে চিড়িয়াখানা। 

এ শহর দেশের অন্য সব শহরের থেকে আলাদা। আসলে অবাঙালিরাই শহরটিকে অন্যমাত্রা দিয়েছে। শুনেছি, মহররমে এখানে বড়সড় শোক মিছিল হয়। কারবালার প্রান্তর তৈরি হয়। ইয়াজিদ বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধক্ষেত্র সাজানো হয়। ফোরাত নদীও খোঁড়া হয় শুনেছি। তাই মহররমের সময় আসতে পারলে ভালো।

কিভাবে যাবেন
ঢাকার আসাদ গেট ও গাবতলী থেকে নাবিল, বাবলুসহ আরো কিছু পরিবহনের বাসে সৈয়দপুর যাওয়া য়ায়। ভাড়া ৫৫০ থেকে ৮৫০ টাকা (এসি, নন-এসি)। ক্যান্টনমেন্ট কিংবা বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশন থেকে নীল সাগর ট্রেনেও সৈয়দপুর যেতে পারেন। ভাড়া ৪৪৫ থেকে ১৪০০ টাকা। শহরে বেশ কয়েকটি অভিজাত আবাসিক হোটেল আছে। আছে জেলা পরিষদের ডাকবাংলো ও রেলওয়ে রেস্টহাউস।

0 comments:

Post a Comment